পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার পশুর হাট। এবার বড় গরুর চাহিদা কম থাকলেও মাঝারি আকারের গরুর প্রতি ঝোঁক বেশি। গরুর দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা ঝুঁকছেন জেলার ঐতিহ্যবাহী ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের দিকে।
Advertisement
জেলার চার উপজেলায় এখন প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে বসছে পাঁচটি প্রধান পশুর হাট। এসব হাট হলো আলমডাঙ্গা (বুধবার), ডুগডুগি (সোমবার), শিয়ালমারি (বৃহস্পতিবার), গোকুলখালি (শুক্রবার) এবং ৯ মাইল ভূলটিয়া (শনিবার)। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হাট আলমডাঙ্গার। এখানে বেচাকেনাও বেশি। এসব হাটে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচেপড়া ভিড়।
ক্রেতাদের অভিযোগ, গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম অনেক বেশি। ফলে বড় গরুর পরিবর্তে অনেকেই মাঝারি আকৃতির গরু কিংবা ছাগল কিনছেন।
বুধবার (৪ জুন) আলমডাঙ্গা পশুহাট ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রির জন্য গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া নিয়ে এসেছেন কৃষক ও খামারিরা। বিভিন্ন জেলা থেকেও ক্রেতারা আসছেন। তবে বড় গরুর ক্রেতা কম। সেই তুলনায় মাঝারি গরু ও ছাগলের চাহিদা বেশি। বর্তমানে তিন মণ মাংস হবে এমন গরু বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকায়।
Advertisement
‘আমি মধ্যবিত্ত মানুষ, গরু কেনার সামর্থ্য নেই। তাই আমাদের জেলার বিখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলই কিনেছি’
কোরবানির জন্য গরু কিনতে এসেছেন রহিম আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রচণ্ড গরম আর ভিড়ের মধ্যে গরু কেনা বেশ কষ্টকর। তবে যেভাবেই হোক, আজ একটা মাঝারি গরু কিনবো।’
আরেক ক্রেতা আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘কোরবানি নিয়তের বিষয়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় দেই। কিন্তু আমি মধ্যবিত্ত মানুষ, গরু কেনার সামর্থ্য নেই। তাই আমাদের জেলার বিখ্যাত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলই কিনেছি।’
আরও পড়ুন:
Advertisement
শিয়ালমারি হাটেও একই চিত্র দেখা গেছে। হাটে ক্রেতার ভিড় থাকলেও গরু বিক্রির হার খুব বেশি নয়। অনেকেই পছন্দের পশু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কেউ ব্যস্ত দরকষাকষিতে।
বেচাকেনা কম বলে জানালেন খামারি আব্দুল সাত্তার। তিনি বলেন, ‘তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। একসময় এই গরুগুলোর দাম বলা হতো সাত লাখ টাকা। এখন একজন মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ বলেছে। অথচ গরুগুলো পালতে অনেক খরচ হয়েছে। খাবারের দাম অনেক বেড়েছে। এই দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে।’
আরেক গরু বিক্রেতা আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চার মণের একটি দেশি গরু এক লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। দাম কিছুটা কম হলেও বিক্রি করতে হয়েছে।’
‘তিনটি গরু নিয়ে এসেছি। একসময় এই গরুগুলোর দাম বলা হতো সাত লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত একজন মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ বলেছে...এই দামে বিক্রি করলে লোকসান হবে’
ছাগল কিনতে আসা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় একটি ছাগল কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। হাটে অনেক ছাগল রয়েছে। পছন্দমতো একটি কিনবো।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, জেলার চার উপজেলায় কোরবানিযোগ্য গরু আছে ৫১ হাজার, ছাগল এক লাখ ৪৪ হাজার এবং ভেড়া তিন হাজার ৯০০। জেলায় পশুর চাহিদা রয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার পশু। অতিরিক্ত পশু ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো যাবে।
তবে, চুয়াডাঙ্গার ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল শুধু কোরবানির সময়ই নয়, সারা বছরই দেশে-বিদেশে চাহিদাসম্পন্ন একটি জাত। জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া এ ছাগল এবার কোরবানির বাজারেও মধ্যবিত্তের কাছে হয়ে উঠেছে অন্যতম নির্ভরতা।
এসআর/এমএস