জাতীয়

ঢাকার অট্টালিকা এখন গোয়ালঘর!

ঢাকার অট্টালিকা এখন গোয়ালঘর!

আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই উদযাপিত হবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ধর্মীয় রীতি মেনে কোরবানি দিতে এরই মধ্যে রাজধানীর ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সামর্থ অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া কিনেছেন। হাট থেকে কেনা এসব গরু, ছাগল, ভেড়া নিয়ে রাখা হচ্ছে বহুতল ভবনগুলোর গ্যারেজে। ফলে ঢাকার অট্টালিকাগুলো এখন অনেকটাই গোয়ালঘরে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

শুক্রবার (৬ জুন) রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, মালিবাগ, বাড্ডা, নতুন বাজারসহ বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে অথবা গ্যারেজে গরু, ছাগল বাঁধা রয়েছে। কেউ কেউ বাড়ির সামনে বাঁশ দিয়ে ঘিরে গরু রাখার ব্যবস্থা করেছেন।

গরু, ছাগলের পাশাপাশি বহুতল ভবনগুলোর গ্যারেজে ঘাস, বিচালি, ভুসিসহ কোরবানির পশুর বিভিন্ন খাবারও রাখা হয়েছে। ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে এ দৃশ্য পরিচিত ও স্বাভাবিক মনে হলেও যারা প্রথম দেখছেন তারা কিছুটা হলেও বিস্মিত হচ্ছেন। কেউ কেউ হাসি-ঠাঁট্টা করে বলছেন, ‘অট্টালিকায় গোয়ালঘর দেখতে ভালোই লাগছে’।

এমনই একজন বনশ্রীর বাসিন্দা জারিফ হাসান। পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় থাকা জারিফ হাসান এবারই প্রথম ঢাকায় ঈদ করবেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় আছি। প্রতি বছরই ঈদের সময় গ্রামে যাই। কিন্তু এবার অফিস থেকে ছুটি পাইনি, তাই গ্রামে যাওয়া হয়নি। ঢাকায় থেকে গেছি।

Advertisement

জারিফ বলেন, ঢাকার মানুষ প্রচুর কোরবানি দেয়, এটা সবাই জানে। কিন্তু কোরবানির গরু রাখার জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেই। সবাই গ্যারেজে অথবা বাসার সামনে গরু রাখছেন। আমাদের গ্রামের বাড়িতে গোয়ালঘরে যেভাবে গরু রাখা হয়, এখন ঢাকায় সেভাবে গরু রাখা হচ্ছে। এতে ঢাকার বাড়িগুলো এখন গোয়ালঘরের মতো হয়ে গেছে। এ দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি।

তিনি আরও বলেন, গ্যারেজে গরুর খাবার যেমন রয়েছে, তেমনি গোবরও রয়েছে। বিচালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এবং বিভিন্ন জায়গায় গোবর পড়ে থাকায় কিছুটা দুর্গন্ধ ছড়ালেও কেউ বিরক্ত হচ্ছেন না। মাঝে মধ্যে দারোয়ান দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে। বাড়ির দারোয়ান এখন রাখালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ঢাকায় না থাকলে এমন দৃশ্য দেখা হতো না।

আরও পড়ুন

শখের গরুতে ‘বড় বিপাকে’ ব্যাপারীরা দাম পড়ে গেছে খাইট্টা-পাটির, ক্রেতা কম ছুরি-চাপাতির হাটে কোরবানির পশু কম, নতুন করে গরু আনছেন ব্যাপারীরা

বনশ্রীর একটি ভবনের গ্যারেজে বেশ কয়েকটি গরু বাঁধা দেখা যায়। ওই বাড়িটিতে দারোয়ানের কাজ করা মো. দেলোয়ার বলেন, এখানে সাতজনের সাতটি গরু আছে। সবাই গতকাল গরু কিনে এনেছেন। গরুর সঙ্গে গরুর খাবারও আনা হয়েছে। যেহেতু গরু কোথাও রাখার জায়গা নেই তাই গ্যারেজে রাখা হচ্ছে। প্রতিবছরই এভাবে গ্যারেজে গরু রাখা হয়। শুধু আমাদের বাসা নয়, ঢাকার সব বাসায় গ্যারেজে এভাবে গরু রাখা হয়। এটা ঢাকার স্বাভাবিক দৃশ্য।

Advertisement

বাড়ির সামনে রাস্তায় বাঁশ দিয়ে ঘিরে একটি স্থানে কয়েকটি গরু রাখতে দেখা যায়। সেখানে পরিষ্কারের কাজ করা মো. মিজানুর নামের একজন বলেন, গ্যারেজে এই গরু রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই মালিকরা এখানে গরু রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এখানেই গরুকে খেতে দেওয়া হয় এবং রাতে এখানেই থাকে। আমি রাতে পাহারা দেই।

রামপুরার একটি বাড়ির মালিক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঢাকার মানুষ কোরবানির গরু এভাবেই গ্যারেজে রাখেন। গরু গ্যারেজে রাখা ছাড়া তো আমাদের কোনো উপায় নেই। গরুর খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ায় এবং গোবর ও চোনার কারণে কয়েকদিন বাসিন্দাদের একটু কষ্ট হয়। তারপরও আমরা সবকিছু মানিয়ে নিয়েছি।

মালিবাগের একটি বাসার বাসিন্দা মো. কামাল হোসেন বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে ঢাকায় কোরবানি দিচ্ছি। প্রথমবার পরিচিত কয়েকজন মিলে ভাগে কোরবানি দিয়েছিলাম। তিন বছর ধরে একাই কোরবানি দিচ্ছি। কোরবানির দুই-তিনদিন আগে গরু কিনে গ্যারেজে রাখি। বাড়ির মালিকও গ্যারেজে রাখেন। তার গরুর সঙ্গে গরু রেখে দেই, কোনো সমস্যা হয় না।

এমএএস/বিএ/এমএস