দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে রয়েছে অসংখ্য সর্পিল মৃত্যুবাঁক। এসব বাঁকে হরহামেশাই ঘটে দুর্ঘটনা। ঘটে প্রাণহানি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের প্রকল্প তদারকি সংস্থা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) যেখানেই বাঁক সেখানেই সোজা করে সড়ক নির্মাণসহ বিপজ্জনক সড়ক বাঁকে ট্রাফিক সাইন স্থাপনের নির্দেশ দেয়। সেসব বাঁকে শুরুতে ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের কথা বলা হলেও পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আইএমইডি।
Advertisement
‘রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিআইসি)’ নামের ওই প্রকল্পটির সরেজমিন পরিদর্শন করে নানান বিষয় তুলে ধরেছে আইএমইডি। প্রকল্পের আওতায় দেশের ৩৪টি জেলা ও ২০৬টি উপজেলায় কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। যেখানে মেরামত ও উন্নয়ন করা হচ্ছে তিন হাজার ৯৮০ কিলোমিটার সড়ক। এরই মধ্যে দুই হাজার ৫৯৫ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ও মেরামতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তবে আরসিআইসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে বেশ ধীরগতিতে, বলছে আইএমইডি। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েও রয়েছে সংশয়। প্রকল্পে ১০টি অডিট আপত্তি দেখা গেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়িত হয়নি। এজন্য প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. কামরুল ইসলামকে দায়ী করছে আইএমইডি।
সড়কের বাঁকের আগে ট্রাফিক সাইন বসানোর নিয়ম আছে। চলমান প্রকল্পটি ধীরগতির প্রকল্প। সঠিক সময়ে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রকল্পে কিছু অডিট আপত্তিও রয়েছে। এটার জন্য দায়ী পিডি।- আইএমইডি পরিচালক এস এম তারিক
Advertisement
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ‘রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (আরসিআইপি)’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের সরেজমিনে পরিদর্শন সংক্রান্ত প্রতিবেদন এলজিইডি বরাবর পাঠিয়েছে আইএমইডি।
আরও পড়ুন
সহসাই স্বস্তি মিলছে না রংপুরবাসীর, ফের ব্যয়-মেয়াদ বাড়ছে ফোরলেনেসড়কের মান উন্নয়নে ৪৫১ কোটি টাকার ব্যয় অনুমোদনসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, ধুলা-কাদায় চরম দুর্ভোগআইএমইডি জানিয়েছে, বছরে একবার সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে অনেক তথ্য যথাসময়ে উপস্থাপিত হয় না। এটি একটি ধীরগতির প্রকল্প। ভবিষ্যতে এ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রকল্প পরিচালক উদ্যোগী না হলে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্ত হবে না বলে মনে করে আইএমএডি। যেসব যানবাহন কেনা হয়েছে সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আইএমইডি পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এস এম তারিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘সড়কের বাঁকের আগে ট্রাফিক সাইন বসানোর নিয়ম আছে। চলমান প্রকল্পটি ধীরগতির প্রকল্প। সঠিক সময়ে সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রকল্পে কিছু অডিট আপত্তিও রয়েছে। এটার জন্য দায়ী পিডি।’
Advertisement
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির সফল সমাপ্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।- আইএমইডি
এলজিইডি জানায়, প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৬ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৭ পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় জুলাই ২০১৮ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি তিন হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বা ৫৩ দশমিক ১২ শতাংশ। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৬৭ দশমিক ১৫ শতাংশ।
নির্ধারিত মেয়াদে প্রকল্পটির কাঙ্ক্ষিত অর্জন সম্ভব করার জন্য প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রকল্পের অগ্রগতি ত্বরান্বিতকরণসহ এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আইএমইডি।
নির্দেশনায় আইএমইডি জানায়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির সফল সমাপ্তির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। প্রকল্পটিতে পরিবেশ এবং প্রতিবেশের যেসব ক্ষতিসাধন করা হয়েছে তার পরিবেশগত খরচ নির্ধারণ করা হয়নি। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের সময় পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণপূর্বক প্রকল্প নিতে হবে।
ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) নির্ধারিত খাতের বিপরীতে থাকা অর্থ সংস্থানের বাইরে সংশোধন ব্যতীত অতিরিক্ত ব্যয়ের কোনো সুযোগ নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগ বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। গত তিন অর্থবছরে পঞ্চগড় ও রাজশাহী জেলার ১০টি অডিট আপত্তির মধ্যে মাত্র তিনটি নিষ্পন্ন হয়েছে। বাকি সাতটি নিষ্পন্ন হয়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধীরগতি নেই। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে চলছে। উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে আমরা অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। আমরা আমাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো।- প্রকল্প পরিচালক কামরুল ইসলাম
আইএমইডি বলছে, অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তির বিষয় প্রকল্প পরিচালকের দায়দায়িত্বের ওপর বর্তায়। সব জেলার অডিট আপত্তি একত্রে সমন্বয় করে নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো। যতটা সম্ভব স্বল্প সময়ের মধ্যে অডিট আপত্তি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আইএমইডিকে লিখিতভাবে অবহিত করবে।
পৃথক এক নির্দেশনায় আইএমইডি জানায়, অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার প্রশস্ততার সঙ্গে মিল রেখে কালভার্টগুলোর প্রশস্ততা ঠিক রাখতে হবে। বিপজ্জনক মোড়গুলোতে ট্রাফিক সাইন প্রয়োজনে একটি ল্যাম্পপোস্টের ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তার স্লোপ অনুযায়ী রাস্তা ভেঙে যাওয়া রোধে প্রযোজ্য স্থানে গাইড ওয়ালের ব্যবস্থা করতে হবে। চলমান অডিট আপত্তিসমূহ নিষ্পত্তি করে এ কার্যালয়ে জরুরিভিত্তিতে অবহিত করতে হবে।
আরও পড়ুন
১৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে তিন কোটি সাশ্রয়!সেতু মন্ত্রণালয় থেকে বাদ যাচ্ছে ১১১৮৬ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয়খানাখন্দে ভরা সড়ক, অলিগলিতেও নেই স্বস্তিএছাড়া অর্থ বরাদ্দের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অর্থছাড়ের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড়ের বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। অসমাপ্ত কম্পোনেন্টগুলোর কাজ নির্ধারিত প্ল্যান অনুযায়ী দ্রুত শুরু করতে হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তার প্রশস্ততার সঙ্গে মিল রেখে অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী কালভার্টগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে কোনো প্রকল্পে অডিট আপত্তি সাধারণ ঘটনা। অডিট নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া প্রকল্পটি সঠিক সময়ে বাস্তবায়নও করা হবে।’
আইএমইডির প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো ধীরগতি নেই। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে চলছে। উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে আমরা অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। আমরা আমাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো।
‘এটি (অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি) একটি চলমান প্রক্রিয়া। ১০টি অডিট আপত্তির মধ্যে ছয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে’- বলেন প্রকল্প পরিচালক।
এমওএস/এমকেআর/এমএফএ/জেআইএম