দেশজুড়ে

কুমিল্লার দুই হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটের মুমূর্ষু দশা

কুমিল্লার দুই হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিটের মুমূর্ষু দশা

•পড়ে আছে ৪৮টি আইসিইউ বেড• এরমধ্যে দেখা দিয়েছে জনবল সংকট• প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় কমেছে গুরুত্ব

Advertisement

করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে সতর্কতা বাড়লেও প্রতিরোধে কুমিল্লায় নেই কোনো প্রস্তুতি। করোনা পরীক্ষার কিট নেই, বন্ধ রয়েছে টিকাদান কর্মসূচিও। এরমধ্যে ইআরপিপি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অচল অবস্থায় রয়েছে আইসিইউ ও আইসোলেশন ইউনিট। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালে ৬০টি বেড থাকলেও এর মধ্যে ৪৮টি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

এই সেবা সচল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে কুমিল্লাবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।

‘কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বেডে একজন রোগীর চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন মাত্র সাড়ে ৬০০ টাকা লাগে। অথচ একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা নিতে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৯০ হাজার পর্যন্ত লাগতে পারে।’

Advertisement

সূত্রমতে, ২০২০ সালের জুন মাসে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপন করা হয় দুটি বিশেষ আইসিইউ ইউনিট। ইমারজেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড পেনডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় এসব ইউনিটে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলেও ২০২৪ এর ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে প্রকল্প না হলে এই ইউনিটগুলো সচল রাখা সম্ভব নয়। এরমধ্যে দেখা দিয়েছে জনবল সংকটও।

বর্তমানে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ৩০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে মাত্র দুইটিতে চিকিৎসাসেবা চালু রয়েছে, বাকি ২৮টি বেড ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। একই অবস্থা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। সেখানেও ৩০টি বেডের মধ্যে মাত্র ১০টি সচল রয়েছে। শত কোটি টাকার জীবন রক্ষাকারী এসব সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে শুধুমাত্র দক্ষ জনবলের অভাবে। গত কয়েক মাস ধরে এই বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বেতন-ভাতাও পাচ্ছেন না।

আরও পড়ুন কোথাও নেই করোনা পরীক্ষার কিট, লক্ষণ থাকলেও ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা  চুরি হয়ে গেছে জেলার একমাত্র করোনা পরীক্ষা ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ  করোনা সংক্রমণ বাড়ায় মোংলা বন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি 

বিগত করোনা মহামারির সময় কুমিল্লায় সাড়ে চার হাজার রোগী আইসিইউতে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে প্রাণ হারান এক হাজার ৮০০ জন।

‘২০২৪ এর ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। নতুন করে প্রকল্প না হলে এই ইউনিটগুলো সচল রাখা সম্ভব নয়।’

Advertisement

কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ডেডিকেটেড আইসিইউ ইউনিটের ইনচার্জ আবদুল মুকতাদির বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় জনবল সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাত্র একজন চিকিৎসক ও চারজন নার্স দিয়ে চলছে একটি ইউনিটের কার্যক্রম। এতে রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইজিও বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট মাইন উদ্দিন মিয়াজী বলেন, আমরা যারা এখনো কাজ করছি, তারা শুধুমাত্র দায়িত্ববোধ থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি সিদ্ধান্ত না এলে এই সেবা চালু রাখা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আবারো জনবল ফিরিয়ে আনা হোক। করোনার সময় আমরা যেভাবে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি, সেটা যেন অন্তত স্বীকৃতি পায়।

‘আমরা চাই, নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করে আবারো জনবল ফিরিয়ে আনা হোক। করোনার সময় আমরা যেভাবে জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি, সেটা যেন অন্তত স্বীকৃতি পায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেন, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বেডে একজন রোগীর চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন মাত্র সাড়ে ৬০০ টাকা লাগে। অথচ একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই চিকিৎসা নিতে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৯০ হাজার পর্যন্ত লাগতে পারে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যেহেতু সবকিছু আছে, নষ্ট না করে মানুষের সেবায় কাজে লাগান। করোনা ছাড়াও আইসিইউ বেড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. আলী নূর বশির বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে। জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পুরোদমে চালু করতে অন্তত ১৫ জন জনবল প্রয়োজন। করোনা পরীক্ষার কিটের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং নতুন করে বয়স্ক ও গাইনি রোগীদের জন্য টিকা সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এফএ/জিকেএস