দেশজুড়ে

বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের হাডুডু খেলায় দর্শকের উল্লাস

বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের হাডুডু খেলায় দর্শকের উল্লাস

চারদিকে শত দর্শকের উল্লাস আর করতালি। কোথাও নেই দাঁড়ানোর এতটুকু জায়গা। কেউ গাছের ডালে, আবার কেউবা উঁচু জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলা দেখায় মত্ত। নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ সবার দৃষ্টি খেলার দিকে। তবে এটা ক্রিকেট কিংবা ফুটবল নয়, ছিল হাডুডু খেলা।

Advertisement

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এ খেলার আয়োজন করা হয় শরীয়তপুরে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে খেলাটি দেখতে ভিড় জমায় দূরদূরান্তের খেলাপ্রেমীরা। আয়োজকদের এমন উদ্যোগে খুশি দর্শকরা। আগামীতেও ধারাবাহিকভাবে খেলাটি আয়োজনের কথা জানান তারা।

শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে আতাউর রহমান খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন নামের একটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের সুবেদার কান্দি এলাকায় খেলাটি আয়োজিত হয়। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা এ খেলায় অংশ নেন এলাকার বিবাহিত ও অবিবাহিত দুটি দলের মোট ১৬ জন সদস্য। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে ২-১ ব্যবধানে বিবাহিত দলকে হারিয়ে ট্রফি জিতে নেয় অবিবাহিত দল।

এমন উৎসবমুখর পরিবেশে খেলা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসে শত শত দর্শক। খেলা উপভোগ শেষে ধারাবাহিকভাবে এ খেলার আয়োজন করার কথা জানায় তারা।

Advertisement

শৌলপাড়া এলাকা থেকে আসা ৭০ বছর বয়সী ইয়ার আলী মুন্সি বলেন, ছোটবেলায় আমরা অনেক হাডুডু খেলা দেখেছি এবং খেলেছি। এই খেলার কথা শুনলেই আমরা চলে যেতাম। কিন্তু এখন আর এই খেলা দেখা যায় না। সুবেদার ষোলঘর এলাকায় আবার খেলার আয়োজন করা হয়েছে। ভীষণ খুশি হয়েছি। আশা করি এই খেলা ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হবে।

খেলা দেখতে আসা অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী জুবায়ের জানায়, বইতে সব সময় জাতীয় খেলা হাডুডুর কথা পড়েছে সে। এই প্রথম এলাকায় এত সুন্দর খেলার আয়োজন করা হয়েছে।

কাবাডি দলের খেলোয়াড় বোরহান বেপারী বলেন, হাডুডু আমাদের জাতীয় খেলা। তবে এখন আর আগের মতো এই খেলার আয়োজন করা হয় না। স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে খেলার আয়োজন করেছে। সবাই অনেক ভালো খেলেছে। আমরা চাই ভালো খেলে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে।

আরেক খেলোয়াড় রিয়াজুল ইসলাম বলেন, বিয়ের আগে এই খেলা অনেক খেলতাম। আমরা হায়ারে অনেক এলাকায় খেলতে যেতাম। তবে বিয়ে করার পর আর তেমন খেলা হয়নি। আজ আমাদের এলাকায় বিবাহিত ও অবিবাহিতদের মধ্যে খেলার আয়োজন করায় আমিও অংশগ্রহণ করেছি। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলার আয়োজন করায় আমরা ভীষণ খুশি। এভাবে যদি খেলাটির আয়োজন করা হয়, তাহলে খেলাটি ধরে রাখা সম্ভব। আমরা চাই প্রতিটি এলাকায় খেলাটির আয়োজন করা হোক।

Advertisement

খেলার আয়োজক কমিটির সদস্য ও আতাউর রহমান খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুরুজ আহম্মেদ খান বলেন, হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেলাটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা। তাছাড়া খেলাধুলা মানুষকে সুস্থ ও সবল রাখে। এই খেলার আয়োজন করায় স্থানীয় খেলাপ্রেমী ও খেলোয়াড়দের ভীষণ সাড়া পেয়েছি। তাই ভবিষ্যতে খেলাটি ধরে রাখতে ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করা হবে।

বিধান মজুমদার অনি/এফএ/এমএস