অর্থনীতি

নতুন রেকর্ড, খেলাপি ঋণ এখন ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা

নতুন রেকর্ড, খেলাপি ঋণ এখন ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত খেলাপি ঋণের নতুন এক রেকর্ডে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা— যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। মাত্র তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা।

Advertisement

বর্তমানে খেলাপি ঋণ মোট বিতরণ করা ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি।অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি ব্যাংক খাতের গভীর দুরবস্থার প্রতিফলন।

দেড় দশকে বিশগুণ ঊর্ধ্বগতি২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল, তখন ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। সেখান থেকে তা প্রায় বিশগুণ বেড়ে ২০২৫ সালে এসে ৪ লাখ কোটির ঘরে পৌঁছেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্বল তদারকি এবং শিথিল নীতির কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গোপন খেলাপির মুখোশ উন্মোচনবিশেষজ্ঞদের ধারণা, এতদিন নানা পুনঃতফসিল ও নীতিগত সুবিধার মাধ্যমে অনেক খেলাপি ঋণকে নিয়মিত হিসেবে দেখানো হচ্ছিল। তবে বর্তমান সরকার পরিবর্তনের পর সেই সুবিধা স্থগিত হলে প্রকৃত চিত্র সামনে এসেছে।

Advertisement

আলোচনায় শীর্ষ গ্রুপগুলোক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচারের। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাসা গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি বড় কোম্পানির নাম উঠে এসেছে, যাদের কেউ জেলে, কেউ দেশ ছেড়েছে।

ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলোতে ঋণের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ পাচ্ছে।

ব্যাংক খাতে আস্থাহীনতাব্যাংকাররা বলছেন, অল্প কয়েকজনকে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়ে গোটা ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়েছে। ফলে নতুন ঋণ বিতরণ ব্যাহত হচ্ছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন অর্থায়ন থেকে এবং আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট বাড়ছে।

এখন দেখা যাচ্ছে খেলাপির প্রকৃত চিত্রবিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অনেকদিনের গোপন খেলাপি এখন প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও পদ্মা এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোতে খেলাপির মাত্রা বেশি। তিনি মনে করেন, নিয়মমাফিক হিসাব করলে জুনে এ চিত্র আরও ভয়াবহ হতে পারে।

Advertisement

তবে তিনি এটিও বলেন, সব ব্যাংককে এক পাল্লায় মাপা ঠিক নয়। অনেক ব্যাংক এখনো ভালো অবস্থায় আছে। তাই পুরো ব্যাংক খাতকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যাবে না।

ইএআর/এমএএইচ/এএসএম