এগ্রো ভিত্তিক পণ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তার লক্ষ্যে ২০০১ সালে নাটোরের একডালায় স্থাপিত হয় প্রাণ এর এগ্রো ফ্যাক্টরি। বছরজুড়ে এখানে প্রায় পাঁচহাজার লোক নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন কাজে। এছাড়া আম ও টমেটোর মৌসুমে আরো প্রায় দুইহাজার লোকের বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কর্মরত এসব শ্রমিকের অধিকাংশ নারী, নাটোর ও পাশ্ববর্তী এলাকায় এরা বসবাস করে বলে জানান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল। তিনি আরো জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কৃষিজাত পণ্য উৎপাদিত হয়, সেজন্যে আমরা নাটোরে এগ্রো ফ্যাক্টরি স্থাপন করি। এ অঞ্চলের নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, রংপুর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, খাগড়াছড়িসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রায় ৭৮হাজার চুক্তিভিত্তিক কৃষক রয়েছে। এসব কৃষকেরা আম, টমেটো, চাল, বাদাম, ডাল, পেয়ারা, দুধসহ বিভিন্ন কৃষিজপণ্য উৎপাদন করে। প্রাণ এর খাদ্যপণ্য প্রস্তুত হয় এসব চুক্তিভিত্তিক কৃষকদের কাছে থেকে সংগৃহীত কাঁচামাল থেকে। তিনি আরো জানান, প্রাণ এর জ্যাম-জেলি, মসলা, সস্, আচার, টাটনি, নুডল্স, সরিষার তেল, লাচ্চাসহ বিভিন্নপণ্য উৎপাদনের জন্যে এখানে বর্তমানে মোট ১৪টি প্রডাকশন লাইন চালু রয়েছে। এছাড়া আম ও টমেটো মৌসুমে সেগুলো সংগ্রহ করে এ ফ্যাক্টরিতে পাল্প তৈরি করা হয়। নাটোর ফ্যাক্টরিতে গ্যাসের সুবিধা না থাকার ব্যাপারে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, নতুন কোন প্রডাকশন লাইন স্থাপন করার উদ্যোগ নিতে পারছি না। তাছাড়া বর্তমান ব্যবস্থায় উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেশি। গ্যাসের সুবিধা না থাকায় এখান থেকে আমরা আমের পাল্প সংগ্রহ করে নরসিংদীতে প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে নিয়ে ম্যাংগো ড্রিংক উৎপাদন করে থাকি। প্যাকেটজাত দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটে। আমরা পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও রংপুরে খামাড়িদের কাছে থেকে দুধ সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করার জন্যে নরসিংদীতে নিয়ে যাই। নাটোর ফ্যাক্টরিতে গ্যাসের সুবিধা পেলে এখানে আমরা ডেইরি প্লান্টসহ অন্যান্য প্লান্ট স্থাপন করব। ফলে এই অঞ্চলে বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, দারিদ্র্যতা দূর হবে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলেও তিনি জানান। নাটোর প্রাণ ফ্যাক্টরির এজিএম সারোয়ার হোসেন বলেন, সকল প্রকার আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ১২৫ বিঘা আয়তনের এই ফ্যাক্টরিতে ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন প্লান্ট রয়েছে। এছাড়া কয়লা চালিত দুইটি চুল্লি রয়েছে যার মাধ্যমে প্রতি ঘন্টায় একটিতে ২০টন এবং অন্যটিতে ১০টন জ্বালানি উৎপাদন হয়। তাছাড়া ফ্যাক্টরির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রয়েছে দুইটি ইটিপি। বর্তমানে যে ১৪টি প্রডাকশন লাইন রয়েছে সেগুলির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যে সম্প্রসারণ হচ্ছে বলেও তিনি জানান।