ধর্ম

বেচাকেনায় বিনয় ও ভদ্রতা বজায় রাখা নবিজির (সা.) সুন্নত

বেচাকেনায় পণ্য ঠিকভাবে বুঝে নেওয়া, সঠিকভাবে মূল্য পরিশোধ করা, বাকি পণ্য বা মূল্য পরিশোধ ও আদায় করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেকেই সহজে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে; দেখা যায় ক্রেতা বা বিক্রেতা কেউই ধৈর্য ধরতে পারছেন না, কঠোর ও রূঢ় আচরণ করছেন। এটা থেকে অনেক সময় বড় বিবাদ বা বিশৃঙ্খলাও তৈরি হয়।

ইসলাম সব ক্ষেত্রেই ধৈর্য, সহনশীলতা ও শালীন আচরণের নির্দেশ দেয়। বেচাকেনা, লেনদেন, পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু এই সমস্যা বেশি হয়, তাই বিভিন্ন হাদিসে নবিজি (সা.) এসব ক্ষেত্রে ভদ্রতা ও শালীনতা বজায় রাখার নির্দেশনা ও উৎসাহ দিয়েছেন বিশেষভাবে। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লল্লাহু আলােইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে বিক্রির ক্ষেত্রে, ক্রয়ের ক্ষেত্রে এবং পাওনা আদায়ের ক্ষেত্রেও উদারতা ও নম্রতা অবম্বন করে। (সহিহ বুখারি)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক পাওনাদারকে বলেন, তুমি তোমার পাওনা ভদ্রতা ও বিনয়ের সাথে আদায় করো, তা পূর্ণরূপে আদায় হোক বা না হোক। (সুনানে ইবনে মাজা)

নবিজি (সা.) নিজেও বেচাকেনা ও লেনদেনে অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ী ছিলেন। আতা ইবনে ইয়াসার (রহ.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আসকে (রা.) বললাম, তাওরাতে বর্ণিত আল্লাহর রাসুলের (সা.) কিছু গুণাবলির কথা বলুন। তিনি বললেন, কোরআনে বর্ণিত তার বিভিন্ন গুণের কথা তাওরাতেও বর্ণিত আছে। এরপর তিনি কিছু গুণের কথা বলার পর বললেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বাজারে কঠোর, রূঢ় ও নির্দয় স্বভাবের ছিলেন না। (সহিহ বুখারি)

নবিজির (সা.) সহধর্মিণী আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোনো রকম অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চৈস্বরে কথা বলতেন না। মন্দ আচরণের বদলায় তিনি মন্দ আচরণ করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। তারপর কখনো তা উল্লেখও করতেন না। (শামায়েলে তিরমিজি)

ছবি: সংগৃহীত

বেচাকেনাসহ সব ক্ষেত্রেই নম্রতা, বিনয় ও মার্জিত আচরণ নবিজির (সা.) সুন্নত। নবিজি (সা.) ঘরে-বাইরে বন্ধু-শত্রু সবার সাথেই নম্র ও বিনয়ী আচরণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তার কোনো স্ত্রী বা কর্মচারির ওপর কখনও হাত ওঠাননি। আল্লাহর পথে জিহাদ ছাড়া তিনি কারো ওপরই হাত ওঠাননি। যে তার ক্ষতি করেছে, তার থেকেও প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। (সহিহ মুসলিম)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন এক ব্যক্তি রাসুলের (সা.) সাথে দেখা করার অনুমতি চাইল। আমি সে সময় তার কাছে বসে ছিলাম। তিনি বললেন, এ অত্যন্ত নিকৃষ্ট প্রকৃতির লোক! তারপর তাকে যখন আসার অনুমতি দেয়া হলো, তিনি তার সাথে খুব নম্রভাবে কথা বললেন। লোকটি বের হয়ে গেলে আমি বললাম, লোকটি সম্পর্কে এরকম বললেন, আবার তার সাথে নম্র ব্যবহার করলেন। রাসুল (সা.) বললেন, আয়েশা! যে লোকের খারাপ ব্যবহারের জন্য লোকজন তাকে পরিহার করে এবং তাঁর থেকে দূরে থাকে, সে সবচেয়ে খারাপ লোক। (শামায়েলে তিরমিজি)

আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, একদিন ইহুদিদের একটি দল একবার নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে এসে সালামকে বিকৃত করে বললো, ‘আস-সামু আলাইকুম’ মানে তোমাদের মৃত্যু হোক।

আয়েশা (রা.) সেখানে বসে ছিলেন। তিনি এ কথার অর্থ বুঝে বললেন,‏ তোমাদের ওপর লানত হোক, মৃত্যু আসুক।

কিন্তু আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, থাম হে আয়েশা! আল্লাহ তাআলা নম্র ব্যবহারকারী। তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। নম্রতার মাধ্যমে তিনি যা দান করেন, কঠোরতা বা অন্য কোনো পন্থায় তা দান করেন না। (সহিহ মুসলিম)

ওএফএফ/এমএস