বাংলাদেশে তদন্ত চলাকালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা যুক্তরাজ্যে তাদের মালিকানাধীন সম্পত্তি লেনদেন করছে এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখপাত্র ও সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আদালত যেসব সম্পত্তি জব্দ করেছে সেগুলো বিক্রি বা লেনদেন করার কথা নয়।
রোববার (২০ জুলাই) বিকেলে দুদকের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম জানায়, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যে তাদের মালিকানাধীন সম্পদ বিক্রি, বন্ধক বা হস্তান্তর করছেন। এই ব্যক্তিদের সম্পদের বিষয়ে যখন বাংলাদেশে তদন্ত চলছে তখন এগুলো লেনদেন করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, গত বছর লেনদেনের এমন অন্তত ২০টি আবেদন জমা পড়েছে।
এ সম্পর্কে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, বিষয়টি আমার জানতে হবে। এনসিএ (ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি-যুক্তরাজ্য নিরাপত্তা সংস্থা) যে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তাতে যে সম্পত্তিগুলো এরই মধ্যে ফ্রিজ বা এটাচ করা হয়েছে সেগুলো অন্যত্র বিক্রি করার কথা নয়। এখান থেকে যেগুলো পাঠানো হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতে তারা তাদের কাজ করেছে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আপনারা যদি সুনির্দিষ্ট কোনো সম্পত্তির কথা বলতে পারেন সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা যাবে। তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
এর আগে গত মে মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার লন্ডনের প্রায় ১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকার (১ পাউন্ড সমান ১৬৩ দশমিক ৩২ টাকা) সম্পদ জব্দ করে। এর তিন সপ্তাহ পর হাসিনা সরকারের ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ জব্দ করা হয়। সাইফুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, হাসিনার শাসনামলে তিনি বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন যার মধ্যে যুক্তরাজ্যেই রয়েছে ৩০০টির বেশি সম্পত্তি।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের জমি নিবন্ধন প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী ঢাকায় তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মালিকানাধীন সম্পত্তি সম্পর্কিত অন্তত ২০টি ‘লেনদেনের আবেদন’ গত এক বছরে জমা পড়েছে। এ ধরনের নথিপত্র সাধারণত বিক্রি, হস্তান্তর বা বন্ধকের বিষয়টিই নির্দেশ করে।বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা যুক্তরাজ্যের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে ঢাকায় তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের ব্যক্তিদের আরও বেশি যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি জব্দ করা হয়।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদ জব্দ করার কথা জানায় এনসিএ।
গত বছরের অক্টোবরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে দেশ-বিদেশে থাকা ৫৮০টি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দেনে আদালত।
গত এপ্রিলে ঋণ জালিয়াতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নামে মামলা করে দুদক।
এদিকে গত মার্চে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের লন্ডনের স্থাবর সম্পত্তি জব্দের নির্দেশ দেন আদালত।
গত ২৪ মে এনসিএ এই দুই ব্যক্তির দখলে থাকা লন্ডনের প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড (প্রায় ১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা) মূল্যের বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করে।
এসএম/এমআইএইচএস/জিকেএস