নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত সিদ্ধিরগঞ্জের প্রতিটি ওয়ার্ডে অপরিকল্পিতভাবে দালানকোঠা আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় নেই খোলা মাঠ ও খেলাধুলার জায়গা। এ পরিস্থিতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কৃত্রিম টার্ফ গ্রাউন্ড। সম্প্রতি এ উপজেলায় চারটি গ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছে। চালুর পর থেকে কিশোর-তরুণসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যে ছুটে যাচ্ছেন বাণিজ্যিক এই টার্ফ মাঠে।
Advertisement
জানা যায়, মিজমিজ-জালকুড়ি-নারায়ণগঞ্জ সড়কের ১০ পাইপ এলাকায় পাশাপাশি চারটি বাণিজ্যিক টার্ফ গ্রাউন্ড রয়েছে। ড্রিম গ্রাউন্ড নামে টার্ফ দিয়ে শুরু হয় এসব বাণিজ্যিক খেলার জায়গা তৈরি। পরে চাহিদা দেখে চ্যাম্পিয়ন্স গ্রাউন্ড, ব্রাদার্স সুইমিংপুল অ্যান্ড টার্ফ ও ডিএনডি নামে আরও তিনটি গ্রাউন্ড গড়ে ওঠে। বর্তমানে পাঁচ নম্বরটির কাজ চলমান রয়েছে।
মাঠ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃত্রিম এই মাঠগুলোর মধ্যকার ড্রিম গ্রাউন্ডের মালিকানায় রয়েছেন ছয়জন । এই মাঠের দৈর্ঘ্য ৯৮ ও প্রস্থ ৬৫। চ্যাম্পিয়ন্স গ্রাউন্ড নামক টার্ফটি দুই যুবকের মালিকানায় চালু হয়েছে। এটির দৈর্ঘ্য ১০৪ আর প্রস্থ ৭০। এছাড়া দুই ব্যবসায়ীর মালিকানায় ব্রাদার্স সুইমিংপুল অ্যান্ড টার্ফ চালু করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ১০১ ও প্রস্থ ৬৪।
কৃত্রিম এই মাঠগুলোতে খেলার জন্য আগেভাগে বুকিং দিয়ে রাখতে হয়। ব্যয়বহুল ভাড়া হওয়া সত্ত্বেও খেলাপ্রেমীদের বুকিং সিরিয়াল মেটাতে হিমশিম খেতে হয় মাঠ মালিকদের।
Advertisement
এসব মাঠের উদ্যোক্তাদের ভাষ্য, সিদ্ধিরগঞ্জে খেলার মাঠ কমে যাওয়ায় রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন প্রান্তের দেখাদেখি তারাও এই উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন ফুটবল প্রেমীদের।
তারা বলেছেন, মূলত মাঠে রাবারের তৈরি একপ্রকার ঘাস ব্যবহার করা হয়েছে যা কৃত্রিম। প্রতি ম্যাচ অর্থাৎ ৯০ মিনিট খেলার জন্য মাঠ ফি বাবদ দুই হাজার থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়। গড়ে প্রতিটিতে প্রতিদিন ৭-৮টি ম্যাচ খেলা হয়ে থাকে।
মাঠে খেলতে আশা তরুণ রাকিবের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে মাঠ স্বল্পতায় আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়ে থাকি। এই মাঠগুলো চালু হওয়ার পর থেকে আমরা বন্ধুরা সপ্তাহে অন্তত দুইটা ম্যাচ খেলি। আমাদের জন্য ভালো হয়েছে। খেলাধুলা করতে পারলে মন ভালো থাকে।
সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মাঠ বুকিংয়ের উদ্দেশ্যে এসেছেন বেসরকারি কর্মকর্তা রোমান রেজা। তিনি বলেন, আমরা কর্মজীবীরা শুক্রবার ব্যতীত খেলার সুযোগ পাই না। এখন এসে দেখি সব মাঠ আগেভাগে বুকিং হয়ে আছে। একটা পেয়েছি তবুও রাত সাড়ে ১০টায়। আড়াই হাজার টাকায় বুকিং দিলাম। টাকা মুখ্য না, সবাই মিলে খেললে আনন্দ লাগে।
Advertisement
নূর নবী নামের এক ব্যবসায়ী জানান, ছুটির দিনে এইসব মাঠে খেলার জন্যে অতিরিক্ত টাকায় বুকিং দেওয়া লাগে। অন্যথায় বাকি দিনগুলোতে ২০০০-২২০০ টাকায় মাঠ মেলে।
ব্রাদার্স সুইমিংপুল অ্যান্ড ট্রার্ফের মালিক মাসুদ জানান, আমাদের এই মাঠের কাজ এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। সুইমিংপুল বানিয়েছি। আরও কাজকর্ম বাকি রয়েছে। অন্তত ৮০ লাখ টাকা ব্যয় হবে ধারণা করেছি। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন ৭-৮টি ম্যাচ ভাড়া দেওয়া যাচ্ছে।
চ্যাম্পিয়নস গার্উন্ড ইয়াসিন আহমেদ বলেছেন, আমরা ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মাঠ করেছি। প্রতিদিন ৬-৭টা অন্তত খেলা থাকে। তবে শুক্র-শনিবার বাড়তি চাপ হয়। আমাদের মাঠ বেশ মজবুত করে বানানো হয়েছে। দিনের বেলায় দুই হাজার আর রাতে আড়াই হাজার এবং ছুটির দিনে তিন হাজার টাকা ভাড়া নেওয়া হয়।
ড্রিম গ্রাউন্ডের মালিক মোস্তফা বলেন, আমরা মোট ৩২ লাখ টাকা খরচ করেছি। শুক্র-শনিবার ৭-৮টি ম্যাচ থাকে। আর বাকি দিনগুলোতে এভারেজ ৫টি ধরা যায়। এখানকার সব মাঠেই ছুটির দিনে ভাড়া বেশি নেওয়া হয়।
এমএন/জেআইএম