জাগো জবস

শুধু ডিগ্রি নয়, ক্যারিয়ারে দক্ষতাও দরকার

শুধু ডিগ্রি নয়, ক্যারিয়ারে দক্ষতাও দরকার

আবু তাহের

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও অনেক তরুণ-তরুণী যখন চাকরির বাজারে ধাক্কা খাচ্ছেন; তখন একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে, আজকের বাজারে কেবল ডিগ্রি কি যথেষ্ট? উত্তরটা হয়তো অনেকেই জানেন, তবুও বাস্তবে সেটি মানা হয় না। বর্তমান কর্মবাজারে শুধু সনদ দিয়ে নয়, ক্যারিয়ার গড়তে হলে দরকার বাস্তব দক্ষতা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ডেটা অ্যানালিটিক্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা কোডিংয়ের মতো প্রযুক্তিনির্ভর স্কিলগুলো মূল্যবান হয়ে উঠেছে; সেখানে শুধু প্রথাগত ডিগ্রির ওপর নির্ভরশীল থাকা মানে নিজের প্রতিযোগিতা ক্ষমতাকে সংকুচিত করে ফেলা।

ডিগ্রি কেন যথেষ্ট নয়বিশ্ববিদ্যালয়ে চার-পাঁচ বছর ধরে পড়ালেখা করে একজন শিক্ষার্থী হয়তো একটি ভালো সিজিপিএ অর্জন করেন কিন্তু তিনি যদি মাইক্রোসফট অফিস, ই-মেইল কমিউনিকেশন, প্রেজেন্টেশন স্কিল বা ইন্টারভিউ ফেস করার মতো মৌলিক দক্ষতায় দুর্বল হন। তবে কর্মসংস্থানের দুনিয়ায় তার প্রতিযোগী হওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ৬৫% শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রির পরও উপযুক্ত চাকরির জন্য প্রস্তুত নন। মূলত দক্ষতা ঘাটতির কারণে।

কোন কোন দক্ষতা জরুরি১. ডিজিটাল স্কিল: যেমন- এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ক্যানভা বা ফটোশপ, ওয়ার্ডপ্রেস ইত্যাদি।২. কমিউনিকেশন স্কিল: নিজেকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা, ই-মেইল লেখা, প্রেজেন্টেশন দেওয়া।৩. প্রযুক্তিগত দক্ষতা: যেমন- মাইক্রোসফট এক্সেল, গুগল ওয়ার্কস্পেস, টাইপিং স্পিড।৪. সমস্যা সমাধানের দক্ষতা: পরিস্থিতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।৫. টিমওয়ার্ক ও লিডারশিপ: শুধু একা নয়, দলগত কাজেও পারদর্শিতা।

Advertisement

কোথায় শিখবেনএখন স্কিল শেখা আগের চেয়ে অনেক সহজ। ইউটিউব, কোরসেরা, উডেমি, লিংকডইন লার্নিং বা বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যেমন- টেন মিনিট স্কুল, শিখো—এসবের মাধ্যমে ঘরে বসেই শেখা যায় অনেক কিছু। শুধু শেখা নয়, আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান স্কিলগুলোর ওপর ভিত্তি করে ‘স্কিল বেইজড হায়ারিং’ করে থাকে। অর্থাৎ তাদের কাছে ডিগ্রি নয়, কাজের দক্ষতাই মুখ্য।

আরও পড়ুন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের টিকে থাকার কৌশল  মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ক্যারিয়ার কেমন? 

ফ্রিল্যান্সিং ও দক্ষতাভিত্তিক ক্যারিয়ারযারা চাকরির চেয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান; তাদের জন্য দক্ষতাভিত্তিক কাজ এখন বড় সুযোগ। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, ভিডিও এডিটিং—এসব শিখে অনেকেই আন্তর্জাতিক ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যেমন- ফিভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার-এ কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সিং জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

দক্ষতা থাকলে সুযোগ বাড়েএখন বহু প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নির্দিষ্ট দক্ষতার কথা বলেই ডাকে। যেমন:* মাস্ট হ্যাভ এক্সপেরিয়েন্স ইন এক্সেল অ্যান্ড পাওয়ারপয়েন্ট* শুড বি অ্যাবল টু ম্যানেজ ফেসবুক অ্যাডস* নলেজ ইন পাইথন উইল বি অ্যান অ্যাডভানটেজ।এগুলো থেকে বোঝা যায়, ডিগ্রি দিয়েই শুরু হয় কিন্তু দক্ষতা দিয়েই জয়!

নতুনদের জন্য পরামর্শ১. বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুধু একাডেমিক পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ না রেখে অন্তত ২-৩টি চাকরি উপযোগী দক্ষতা গড়ে তুলুন।২. দক্ষতা অর্জনের পর ছোটখাটো কাজ নিয়ে অভিজ্ঞতা তৈরি করুন।৩. ফেসবুক, ইউটিউব বা সময় নষ্টের প্ল্যাটফর্মকে শেখার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করুন।৪. পোর্টফোলিও তৈরি করুন, নিজের দক্ষতার প্রমাণ দিন।

Advertisement

আজকের পৃথিবীতে যিনি যত বেশি শিখছেন; তিনি তত বেশি এগিয়ে যাচ্ছেন। কাজেই এখন সময়, শুধু সার্টিফিকেট নয়; স্বীকৃতি পাওয়ার আগে নিজের যোগ্যতা তৈরি করে নেওয়ার। ডিগ্রি থাকুক কিন্তু দক্ষতাও থাকুক। তবেই গড়ে উঠবে একটি দৃঢ়, টেকসই ক্যারিয়ার।

এসইউ/জিকেএস