অর্থনীতি

মৌসুম শেষে বাড়ছে দেশি আমের দাম

মৌসুমের শেষপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশি আমের সময়কাল। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আমের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সুস্বাদু এই ফলের দামও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে ক্রেতাদের একাংশ বলছেন, বাজারে আমের ঘাটতি নেই। তবুও সিজনের অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন অসাধু বিক্রেতারা।

রাজধানীর কাঠালবাগান, গ্রিনরোড, রাজাবাজার, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখনো আম্রপালি, আশ্বিনা, বারি জাতের আমের ভালো সরবরাহ রয়েছে। তবে দাম সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এসব বাজারে আম্রপালি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। ছোট আকৃতির ‘ক্যাট’ আম্রপালি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এই দাম ছিল যথাক্রমে ১২০-১৩০ টাকা এবং ৫০-৬০ টাকা।

সুরমা ফজলি আমের কেজিপ্রতি দাম এখন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ব্যানানা আম কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, মৌসুম শেষের দিকে চলে আসায় আমের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে গেছে। তাই দাম বেড়েছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা আলী আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, হিমসাগর, ল্যাংড়া এসব আম এখন আর বাজারে নেই। আড়তে আম্রপালির সরবরাহও কমে গেছে। তাই আমরা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি, সেই দামই খুচরা পর্যায়ে প্রতিফলিত হচ্ছে।

মালিবাগের আরেক বিক্রেতা আসিফ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আম পচনশীল পণ্য। এখানে স্টক রাখার সুযোগ নেই। যখন সরবরাহ কমে, তখন দাম বাড়ে। এটাই স্বাভাবিক।

তবে এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন অনেক ক্রেতাই। বাজারে আম কিনতে আসা আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে যে আম ১৭০ টাকা ছিল, এখন সেটা ২৩০ টাকা। এত দ্রুত দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই।

অন্য ক্রেতা আয়েশা খাতুন বলেন, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এখনো পর্যাপ্ত আম বিক্রি হচ্ছে। তাই সিজনের অজুহাতে দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এখানে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে।

এদিকে আশ্বিনা ও বারি জাতের আমের সরবরাহ কিছুটা বেশি হলেও, সেই আমেরও দাম বেড়েছে। বারি জাতের আম কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮০-৯০ টাকা। কাঁচা আশ্বিনা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়, যা আগেও ছিল ৩০-৪০ টাকা।

অন্যান্য ফলের বাজার চিত্র

বাজারে আম ছাড়াও অন্যান্য মৌসুমি ফলের দামেও রয়েছে বৈচিত্র্য। ড্রাগন ফল (ছোট) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়, বড় সাইজ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। পেয়ারা ৫০-৮০ টাকা কেজি, জাম্বুরা প্রতি পিস ৫০-৭০ টাকা, লটকন ১৮০-২২০ টাকা, আমড়া ৬০ টাকা, আর বিলাতি গাব বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। আনারসের বড় জোড়া ১২০-১৪০ টাকা, ছোট জোড়া ৬০ টাকা।

তবে সবচেয়ে চড়া দাম কাঁঠালের বাজারে। ৬-৭ কেজির পাকা কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ১৩০-১৫০ টাকার মধ্যে। ছোট কাঁঠাল ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে এক সপ্তাহ আগে দাম ছিল ৭০-৮০ টাকা। মালিবাগের ফল বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, আগে গাজীপুর থেকে প্রতিদিন ট্রাকভর্তি কাঁঠাল আসতো। এখন সিজন শেষের দিকে, সেই ট্রাক আসছে না, তাই দামও বেশি।

সার্বিকভাবে ফলের বাজারে, বিশেষ করে আম ও কাঁঠালের দামে বড় ধরনের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। সরবরাহ কমেছে বলেই দাম বাড়ানো হয়ে- এমনটা বলছেন বিক্রেতারা। তবে ক্রেতা ওম্মুল ওয়ারা জাগো নিউজকে বলেন, এটি স্রেফ সিজনের সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি। এখন দেখার বিষয় পরবর্তী কয়েক সপ্তাহে সরবরাহের গতি ও সরকারের নজরদারি কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

ইএআর/এএমএ/জেআইএম