রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম (ছদ্মনাম)। শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে খুব বেশি ভালো নেই তিনি।
গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ভয়াবহ যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছেন না শামীম। যখনই সেদিনের স্মৃতি ফিরে আসছে তখনই দিনে দু-একবার আবোল-তাবোল বকছেন, অশান্ত হয়ে উঠছেন । এ সময় তার কাছে থাকা স্বজনদেরও চিনতে পারছেন না। এমন হলে চিকিৎসকরা তাকে চেতনানাশক ইনজেকশনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে শান্ত করছেন। সেদিনের বিমান দুর্ঘটনার পর এই শিক্ষার্থী উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন।
উত্তরার বিমান দুর্ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে গঠিত ১৩ সদস্যের তদারকি কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রিস্ট) ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া রোববার (২৭ জুলাই) জাগো নিউজের প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশনের কারণে ওই শিক্ষার্থীর মেমোরির ফ্ল্যাশব্যাক হচ্ছে।
তিনি জানান, তদারকি কমিটির সদস্য ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. জহির উদ্দীন আজ (রোববার) থেকে প্রতিদিন ওই শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে সেশন নেবেন। নিয়মিত ওই সেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর অ্যাকিউট স্ট্রেস রিয়েকশন ও মেমোরি ফ্ল্যাশব্যাক কমে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া জানান, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্ট (বিএপি) ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর উদ্যোগে বিশেষ বহির্বিভাগীয় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দ্বিতীয় তলার ২৪২ নাম্বার কক্ষে সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও, দুপুর ১টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত জরুরি বিভাগের ১৩৫ নাম্বার কক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে।
তবে বিমান দুর্ঘটনায় কোমলমতি শিশুসহ অন্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসার তদারকির জন্য ১৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও ঐ ঘটনায় আজ সকাল পর্যন্ত মাত্র একজন কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক,শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অন্যদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদারকি কমিটির সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া জানান, আজ তারা ইনস্টিটিউট থেকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে একটি টিম পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অন্যদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করবেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মধ্যে কেউ অ্যাকিউট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন কিবা অন্য কোনো জটিলতায় ভুগছে কি না তা জানার চেষ্টা করবেন। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে অনুরোধ করবেন বলেও তিনি জানান।
এমইউ/এএমএ/জিকেএস