অর্থনীতি

মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় শেয়ারবাজারে দরপতন

টানা নয় কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা থাকার পর দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। মূলত এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী মুনাফা তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে বিক্রির চাপ বাড়ানোর কারণে এই দরপতন হয়েছে। এতে গত কয়েকদিন ধরে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখানো বেশিরভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও দরপতন হয়েছে।

রোববার (২৭ জুলাই) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় সবকটি সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

টানা নয় কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর রোববার (২৭ জুলাই) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। মাঝে কিছু সময়ের জন্য বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও বিক্রির চাপ বাড়ায় ফের দরপতন হয়। এতে দাম কমার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩২টির। আর ৫০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮২টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১০৭টির দাম কমেছে এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ১৯টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৬২টির দাম কমেছে এবং ২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৬৩টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৪টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৪টির দাম কমেছে এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

আরও পড়ুন শুধু শিল্পপতিদের নয়, মধ্যবিত্তেরও আয়ের উৎস হতে পারে শেয়ারবাজার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে যথাযথ জ্ঞান অৰ্জন করতে হবে

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৫৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৫৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বাজারের এই পরিস্থিতি সম্পর্কে ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিল। এতে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। যারা কম দামে শেয়ার কিনেছেন, তারা মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এতে বাজারে বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। সে কারণেই আজকের দরপতন হয়েছে।

তিনি বলেন, এই দরপতনের জন্য বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। এটা সাময়িক। শেয়ার দাম কমে যাওয়ার মধ্যেও বাজারে ক্রেতা বেশ ভালো ছিল। যে কারণে লেনদেন ৮০০ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। এটা ভালো লক্ষণ। মূলত মুনাফা তুলে নেওয়ার কারণেই বাজারে কিছুটা মূল্য সংশোধন হয়েছে।

এদিকে সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। তবে লেনদেন সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার বেশি হয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮৬৫ কোটি ৪ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৯৫১ কোটি ৭৮ টাকা। এ হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৮৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো। কোম্পানিটির ৩৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সিটি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি ১৯ লাখ টাকার। ২৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার শেয়ার নদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ঢাকা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ব্যাংক এশিয়া এবং আইএফআইসি ব্যাংক।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪৯ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৪৭ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪০টির এবং ১৪০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

এমএএস/ইএ/জিকেএস