দেশজুড়ে

অনুষ্ঠান করলেই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে দিতে হয় ‘চাঁদা’

বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা, মুসলমানি বা অন্য যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে দলবল নিয়ে এসে হাজির। এসময় মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। তাদের চাঁদা দেওয়া অনেকটা বাধ্যতামূলক। না দিলে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। সামর্থ্যবান না কি অসামর্থ্যবান কোনো কিছুই তোয়াক্কা করেন না। চাঁদা সবাইকে দিতেই হবে।

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে এই তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় তাদের চাঁদা দিতে হয়।

বড়তাকিয়া এলাকার জাবেদ হোসেন বলেন, এ যেন মগের মুল্লুক। এমনভাবে দাবি করেন যেন এটা তাদের প্রাপ্য, ন্যায্য অধিকার। তাদের কথাবার্তা আর ভঙ্গিতে মনে হয় আগেই তারা টাকা জমা দিয়ে রেখেছেন।

করেরহাট এলাকার আলমগীর হোসেন বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা চলে আসে। সুন্দর করে বলে, বিশেষ অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করে ৫০০ টাকা দিলেও নেয় না। পরে অনেক বাকবিতণ্ডার পর মান-সম্মানের ভয়ে ২৫০০ টাকা দিয়ে কোনোভাবে ছাড় পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে ২ হাজার, ৫ হাজার, ১০ হাজার কিংবা তারও বেশি দাবি করে। না হয় নাজেহাল করার হুমকি দেয়।

এই ভুক্তোভোগী আরও বলেন, বাধ্য হয়ে পুলিশকে কল দিলে ওদের সঙ্গে মোবাইলে বিষয়টা মিটমাট করে দেওয়া হয়। এরপর তারা টাকা (চাঁদা) না নিয়ে চলে যাওয়ার সময় হুমকি দেয়। বলে যায়- ‘নতুন বউ কীভাবে ঘরে উঠাও দেখে নেবো’।

শনিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে এমনই একটি ঘটনা ঘটে মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার হিঙ্গুলী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের উত্তর ইসলামপুর গ্রামের মোস্তফা মিস্ত্রির বাড়িতে।

স্থানীয়রা বলছেন, এসব তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ শুধু চাঁদাবাজিতে সীমাবদ্ধ নয়, মাদক কারবারের সঙ্গেও জড়িত। সম্প্রতি এমনই একটি ঘটনা ঘটছে। ১১ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবাসহ আটক হয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের ছয়জন।

এ বিষয়ে বিজলী নামে তৃতীয় লিঙ্গের একজন বলেন, আমরা সমাজের অবহেলিত। মানুষ যা দেয়, তা নিয়ে কোনোমতে চলতে হয়। একটি অনুষ্ঠানে লাখ লাখ টাকা খরচ করে। কিন্তু আমাদের ১-২ হাজার টাকা দিতে গায়ে লাগে।

জোরারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, হিঙ্গুলী এলাকা থেকে জানানোর পর তৃতীয় লিঙ্গের লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা ওই বাড়ি থেকে চলে যান। কেউ যদি থানায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেন তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এম মাঈন উদ্দিন/জেডএইচ/এমএস