গাইবান্ধায় গাছে বেঁধে এক নারীকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি আমগাছের গোড়ায় এক নারীকে হাতে ও কোমরে বেঁধে রাখা হয়েছে। পাশে কিছু শিশু ও লোকজন দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পা দেখা যাচ্ছে কিন্তু তাদের চেনা যাচ্ছে না।
এক পাশে জুতা পড়ে আছে। ওই নারীর মাথার মাঝখানে চুল কাটা। পোশাক এলোমেলো। চোখে-চোখে নির্যাতনের ছাপ। অসহায় দৃষ্টিতে একদিকে তাকিয়ে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর নাম শহিদা বেগম। তিনি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্ধা গ্রামের দুলা মিয়ার স্ত্রী।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় ও ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে। শহিদা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে স্থানীয় প্রভাবশালী ইউনুস মিয়া ও তার লোকজন তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। পরে তারা বেধড়ক মারধর করেন। মাথার চুল কেটে দেন। জুতার মালা পড়িয়ে দেন। পরে বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করেন তারা।
এ ঘটনায় হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে অভিযোগ শহিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার শরীরে এখনো আঘাতের চিহৃ রয়েছে। নির্যাতন করে আমার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। গরু বিক্রির টাকা সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। তারা আমাকে এখানে থাকতে দেবে না। আমার বসতভিটার জমিটুকু নিতে চায়।’
শহিদা বেগম বলেন, ‘থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না। নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছি আমরা। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূূলক শাস্তি চাই।’
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার পলাশবাড়ি উপজেলার তালুক ঘোড়াবান্ধা (মাঝিপাড়া) গ্রামের দিনমজুর দুলা মিয়ার স্ত্রী শহিদা বেগম পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে বড় জায়ের বাবার বাড়িতে পোশাক বানাতে যান। পরে সেখান থেকে ফিরে এলে তাকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে মারধর করেন স্থানীয় ইউনুস মিয়া ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে শহিদা বেগমকে তার উঠানের আমগাছে হাত ও পা দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়। সেখানে প্রায় আড়াই ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়।
কাঠ ও বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে মারধর করা হয়। পরে চুল কেটে এবং মুখে রং মেখে দেওয়া হয়। তারপর জুতার মালা পড়িয়ে দিয়ে তাকে বিবস্ত্র করে রাখা হয়। এরপর ওই নারী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ওই নারীর হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান মজনু বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউনুস মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি সাংবাদিকের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। এসময় তার লোকজন উল্টো সাংবাদিকের ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারণ করেন।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী থানার আওতায় হরিণাবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সবুজার আলী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ওই নারীকে নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাকে মামলা করতে বলা হয়েছে।
আনোয়ার আল শামীম/এসআর/এমএস