থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সংঘর্ষে ক্ষতবিক্ষত সীমান্তে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও উত্তেজনা এখনো কমেনি। ৪১ জনের প্রাণহানির পরে গত সোমবার (২৮ জুলাই) রাত থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত কূটনৈতিক বৈঠকের পর আসে বহুল প্রতীক্ষিত এই ঘোষণা।
যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে সীমান্তের একাধিক স্থানে হামলার অভিযোগ তোলে। তবে কম্বোডিয়া নতুন কোনো হামলার কথা অস্বীকার করে। থাইল্যান্ড পরে স্বীকার করে, সিসাকেত প্রদেশের কাছে বিতর্কিত ফু মাখুয়া পাহাড় এলাকায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত গোলাগুলি চলেছে, যদিও ভারী অস্ত্র ব্যবহার হয়নি।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপথাইল্যান্ড এরই মধ্যে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কাছে অভিযোগ দিয়েছে। তবে সীমান্তে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে এবং অন্তত ২ লাখ ৬০ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে অনেকেই ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন>>
এই যুদ্ধবিরতির পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মালয়েশিয়ায় আয়োজিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক, যেখানে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত এবং থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম উইচায়াচাইয়ের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, যিনি আসিয়ানের নেতৃত্বে উদ্যোগটি এগিয়ে নিয়ে যান।
ট্রাম্পের ফোনালাপ ও বাণিজ্যসংযোগযুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানান। হোয়াইট হাউজ জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে হুন মানেত ও ফুমথামকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়া যৌথভাবে যুদ্ধবিরতির পর্যবেক্ষণে অংশ নেবে বলেও জানানো হয়।
ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাই রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রশ্নে আলোচনা এখন আবার শুরু করা যাবে।
কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড উভয়ের ক্ষেত্রেই এই শুল্ক শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। ট্রাম্প আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, সীমান্ত সংঘর্ষ চললে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ হয়ে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার একটি ল্যান্ডমাইনে পাঁচ থাই সেনা আহত হলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তার আগেই মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনার মৃত্যুর ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক খারাপ হয় এবং থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে।
কম্বোডিয়ার ওডার মিনচেই প্রদেশের বাসিন্দা সকলাং স্লাই বলেন, আমি খুব শঙ্কিত—যেকোনো সময় আবার সংঘর্ষ শুরু হতে পারে। থাইল্যান্ডই প্রায়ই উসকানি দেয়, পরে দোষ দেয় আমাদের। আমি আর কোনো যুদ্ধ দেখতে চাই না।
থাইল্যান্ডের সুরিন প্রদেশের এক গ্রামপ্রধান কৃসদা জিন্ডাস্রি জানান, সোমবার রাতেও গুলির শব্দ শোনা গেছে। তার ভাই জিরায়ু বলেন, পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছি না। আবার কিছু হলে আমাকেও পালাতে হবে।
সূত্র: ইউএনবিকেএএ/