কুড়িগ্রাম সদর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার অবহেলায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৩০ জুলাই) রাতে হাসপাতালের ষষ্ঠ তলার পুরুষ ওর্য়াডে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া রোগীর নাম ফুলবাবু দাস (১৮)। তিনি উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের পূর্ব নাওড়া গ্রামের সুখ চরণ দাসের ছেলে।
নিহতের স্বজনদের দাবি, বুধবার রাত ৮টার দিকে ফুলবাবুর শ্বাস কষ্ট দেখা দিলে তাকে দ্রুত কুড়িগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে তাকে ভর্তি করে নেওয়া হয় ষষ্ঠ তলায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ডাক্তার ও নার্স তাকে দেখতে আসেননি। ততক্ষণে মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়। রাত ১১টার দিকে মারা যান তিনি।
রোগীর মা বকুল রানী দাস বলেন, হাসপাতালে ভর্তি করার পর আমার ছেলের মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। পরে শ্বাসকষ্টে ছেলে আমার মারা যায়। ছেলে মারা যাওয়ার সময় ডাক্তার ও নার্সকে আমরা পাইনি। চিকিৎসার অবহেলায় তার ছেলে ফুলবাবু মারা গেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
ফুলবাবু দাসকে হাসপাতালে নিয়ে আসা পল্লিচিকিৎসক বাদল সরকার বলেন, ‘রাত ৯টার দিকে আমরা কাশির সঙ্গে রক্ত পড়া ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো ডাক্তার বা নার্স দেখতে আসেননি। জরুরি বিভাগ থেকে যেসব ওষুধপত্র দিয়েছে, সেসব নিয়ে এসে দেখি এখানে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য চিল্লাচিল্লি করা হচ্ছে কিন্তু অক্সিজেন দেওয়া হয়নি। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তার আসার জন্য অনুরোধ করলেও কেউ আসেননি।’
হাসপাতালের প্রত্যক্ষদর্শী সবুজ কুমার বলেন, ‘ফুলবাবু অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে যাচ্ছিলেন। তার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। পরে আমি তাকে বিছানায় শুইয়ে রাখি। রোগীর অক্সিজেনের সমস্যা দেখে নার্সদের ডাক দিই কিন্তু প্রায় আধাঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কেউ আসেননি। ততক্ষণে রোগী মারা যায়।’
এ বিষয়ে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স কোহিনুর খাতুন বলেন, ‘আমরা একটা সেকেন্ডের জন্য বসে নাই। এখানে শত শত রোগী। সেসময় একসঙ্গে সাতজন রোগী আসায় রিসিপশন ভরা ছিল। এরকম ভরা থাকলে কি কাজ করা সম্ভব? দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল না বলে দাবি করেন তিনি।
দায়িত্বরত চিকিৎসক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। ওই রোগীর বিষয়ে কেউ কিছু আমাকে জানাননি। আপনারা আবাসিক মেডিকেল অফিসারের সঙ্গে কথা বলুন।’
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন চিকিৎসকের অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আমি সকালে তদন্ত করেছি। সেসময় রোগীর চাপ ছিল খুব। যিনি মারা গেছেন তার শরীরে প্রচুর জ্বর ও মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। তাকে রেফার করা হলেও অন্যত্র যাননি।’
রোকনুজ্জামান মানু/এসআর/জেআইএম