দেশজুড়ে

কাঁদলেন কাঁদালেন জুলাই শহীদের মায়েরা

“আমার ছেলেটা অনেক মেধাবী ছিল। আমাকে আদর করে ‘মম’ বলে ডাকতো। আমার সন্তানদের মধ্যে আদিলই ‘মম’ বলে ডাকতো। এখন আর কেউ ‘মম’ বলে ডাকে না। আমাকে ছাড়া সে ঘুমাতে পারতো না। সে বলতো মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয় না। আজ আমার ছেলে নেই। আমি আমার ছেলেকে ভুলতে পারছি না।”

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে শহীদ হওয়া আদিলের মা আয়েশা আক্তার। গত বছরের ১৯ জুলাই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ মারা যান আদিল হোসেন।

আয়েশা আক্তারের কান্নার সঙ্গে সঙ্গে পুরো সম্মেলন কক্ষে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। অনুষ্ঠানে প্রায় সবার চোখেই পানি চলে আসে। অনুষ্ঠানে উপস্থিতি অতিথিরা কিছুক্ষণ পরপরই তাদের চোখ মুছছিলেন।

শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘জুলাইয়ের মায়েরা’ শীর্ষক অভিভাবক সমাবেশ ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে যখন শহীদের মায়েরা স্মৃতিচারণ করছিলন, তখন এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

আক্ষেপ করে শহীদ আদিলের মা আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আদিল সেনাবাহিনীতে যেতে চেয়েছিল। অফিসার হবে, দেশের কাজ করবে। ওর মামা একজন সেনাসদস্য। তাকে দেখেই বলতো, একদিন আমিও আর্মি অফিসার হবো। আর সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতেই কি-না ছেলেটা মরে গেলো।’

গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে দুই চোখ হারিয়ে ফেলেন মাহবুব। তার মা হালিমা বেগম কান্না করতে করতে বলেন, ‘আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে আমার ছেলে দুই চোখ হারালো। যে দেশের জন্য চোখ হারালো সেই দেশ দেখতে পারলো না। এর চেয়ে কষ্ট আর কী হতে পারে! আমার ছেলেটা এখন আর কোথাও যায় না। আগে যে কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সবার আগে রেডি থাকতো। এখন আর সে অনুষ্ঠানে যেতে চাই না। আমি আমার ছেলের কষ্ট বুঝি। যারা আমার ছেলের চোখ নষ্ট করেছে তাদের বিচার চাই।’

গণঅভ্যুত্থানে আরেক শহীদ মাওলানা মাবরুর হোসাইনের মা শাহনাজ বেগম।

তিনি জানান, তাদের বংশে কোনো ছেলে হচ্ছিল না। এজন্য তিনি ১৮ মাস রোজা রেখেছিলেন। পরে তার পেটে জন্ম নেয় মাবরুর হোসাইন। পড়াশোনা করে আলেম হয়েছিলেন।

শাহনাজ বেগম বলেন, ‘সে অনেক হিসেব করে চলতো। সে সবদিক দিয়েই অনেক ভালো ছিলো। আমার সেই ছেলেকে তারা মেরে ফেলেছে। আমরা হাসিনার ফাঁসি চাই।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, ‘আমরা সবাই আবেগাপ্লুত। মাকে তার সন্তানের জন্য সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো শব্দ পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। প্রতিটি মায়ের কাছে তার সন্তান রাজপুত্রের মতো। যখন তার রাজপুত্রটি হারিয়ে যায়, তখন তাকে আর সান্ত্বনা দেওয়া যায় না। সান্ত্বনার ভাষা আমাদের নেই।’

তিনি বলেন, আমরা একটা বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে যেন আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।

মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/জেআইএম