নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ট্রাস্টের অধীন অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে পাঁচটি অনুষদের ডিন ও বিভিন্ন বিভাগে পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
সোমবার (৪ আগস্ট) জাতীয় দৈনিকে এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো নিজেদের কোনো ওয়েবসাইট চালু না করায় প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত আবেদন জমা দিতে হবে ই-মেইল অথবা সরাসরি। সরাসরি আবেদন জমার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাস উত্তরার দিয়াবাড়িতে যেতে হবে।
ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ডিন ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের পরিচালক পদে নিয়োগের পর গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রচারমূলক কার্যক্রম শুরু করা হবে। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগের পর ২০২৬ সালের শুরুতে সেমিস্টার ভিত্তিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
যেসব অনুষদে ডিন নিয়োগ দেবে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী—পাঁচটি অনুষদে ডিন পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। সেগুলো হলো স্কুল অব বিজনেস, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং, স্কুল অব হিউমেনিটিজ অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস, স্কুল অব সায়েন্সেস এবং স্কুল অব সোশ্যাল বিজনেস।
এছাড়া প্রশাসনিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলো হলো- হিউম্যান রিসোর্স (এইচআর) বিভাগের উপ-পরিচালক, আইটি বিভাগের উপ-পরিচালক, ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের সহকারী পরিচালক, অ্যাডমিশন, প্রমোশন অ্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিং বিভাগের উপ-পরিচালক।
আবেদনের সময়সীমা, পদ্ধতি ও বেতনবিজ্ঞাপ্তির তথ্যমতে, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি অনুষদের ডিন ও প্রশাসনিক চারটি পদে আবেদন শুরু হয়েছে। আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত আগ্রহীরা আবেদন করতে পারবেন। এসব পদে আকর্ষণীয় বেতন দেওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো কোনো ওয়েবসাইট চালু না থাকায় অনলাইনে আবেদনের সুযোগ নেই। প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্তসহ আবেদন পাঠাতে হবে hr@grameenu.ac এই ই-মেইলে। তাছাড়া যে কোনো প্রয়োজনে ই-মেইল করা যাবে info@grameenu.ac। সরাসরি যোগাযোগের জন্য যেতে হবে ০৬, মেইন রোড, দিয়াবাড়ি সাউথ, তুরাগ, উত্তরা, ঢাকা ঠিকানায়।
কার্যক্রম শুরু উত্তরায়, স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে পূর্বাচলেগ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বর্তমানে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ির একটি ভবনের চারটি ফ্লোরে প্রাথমিকভাবে শুরু করা হয়েছে। দিয়াবাড়ির ভবনে এরই মধ্যে শ্রেণিকক্ষসহ সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। দ্রুতই শুরু হবে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া।
তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে রাজধানীর পূর্বাচলের উলুখোলার এক্সপ্রেসওয়ে ঘেঁষে। এরই মধ্যে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৭৬ বিঘা জমি ক্রয় করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬০ হাজার বর্গফুট জায়গা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। তবে তা পর্যায়ক্রমে আরও বিস্তৃত হবে।
গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রস্তুত করে ইউজিসিতে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়া হচ্ছে। অনুমোদনের পর তারা কোন কোন বিষয় শুরুতে পড়ানো হবে, তা জানাতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা জানান, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। শিগগির জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। বেশ কয়েকটি বিভাগ খোলার লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। ইউজিসিতে আবেদন করা হবে। ইউজিসি যত বিষয় খোলার আবেদন মঞ্জুর করবে, তত বিষয় নিয়েই গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করবে।
চাকরিপ্রার্থী নয়, লক্ষ্য চাকরিদাতা তৈরিগ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য কী, ভিন্নতা কী থাকবে- এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিশন সামাজিক ব্যবসার নীতিমালা ও বৃহত্তর লক্ষ্য– তিন শূন্য অর্জন (জিরো পোভার্টি, জিরো আনএমপ্লয়মেন্ট, জিরো নেট কার্বন এমিসনস) লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হবে চাকরিপ্রার্থী নয়, চাকরিদাতা তৈরি করা। এখানে সামাজিক ব্যবসাভিত্তিক ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বিত কারিকুলাম থাকবে। উচ্চশিক্ষার মাধ্যমে তিন শূন্য অর্জনের লক্ষ্য পূরণ করা হবে। হাতেকলমে শিক্ষা, কমিউনিটির সমস্যা সমাধানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতারা জানান, গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার একটি সাহসী পদক্ষেপ। এটিকে এমন একটি ক্ষেত্র হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে, যেখানে ভবিষ্যতের সামাজিক উদ্যোক্তারা তৈরি হবে; যারা একটি নতুন অর্থনৈতিক মডেলকে নেতৃত্ব দেবেন, যা হবে মানবকেন্দ্রিক, সমস্যার সমাধানমুখী এবং পরিবেশবান্ধব।
জানা যায়, গত ১৭ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২২ শর্তে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে আদেশ জারি করে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ ট্রাস্ট এ ইউনিভার্সিটির জন্য আবেদন করে। এটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল হাসান।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে গ্রামীণ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া শর্তের মধ্যে আছে সাময়িক অনুমতির মেয়াদ হবে সাত বছর, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টির কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে। ন্যূনতম তিনটি অনুষদ ও এসব অনুষদের অধীন কমপক্ষে ছয়টি বিভাগ থাকতে হবে। ইউনিভার্সিটির নামে সংরক্ষিত তহবিলে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা যে কোনো তফসিলি ব্যাংকে জমা থাকতে হবে। এ রকম ২২টি শর্ত তাদের মানতে হবে।
এএএইচ/ইএ/জেআইএম