‘অস্বাস্থ্যকর ধরনের রুগ্ণ’ মডেল ব্যবহারের অভিযোগে বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ড জারার দুটি বিজ্ঞাপনচিত্র নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাজ্য। দেশটির বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষণ সংস্থা অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি (এএসএ) জানিয়েছে, এসব বিজ্ঞাপন ছিল ‘দায়িত্বহীন’ ও সেগুলো আর কখনো প্রকাশ করা যাবে না।
এএসএ এক বিবৃতিতে জানায়, এক বিজ্ঞাপনে মডেলের চুলের খোঁপা ও তার পাতলা পায়ের আকৃতি বাড়িয়ে দেখানোর জন্য ব্যবহৃত ছায়ার কারণে তাকে ‘রোগা ও ক্লান্ত’ দেখাচ্ছিল। অন্য বিজ্ঞাপনে জামার ডিজাইন ও দাঁড়ানোর ভঙ্গির কারণে মডেলের কলারবোন (বুকের উপরের অংশে, গলা ও ঘাড়ের নিচে এবং কাঁধের উপরে অবস্থিত হাড়) দৃষ্টিকটুভাবে বেরিয়ে গেছে।
জারা অবশ্য বলেছে, ‘বিতর্কিত’ ছবিগুলোর মডেলদের স্বাস্থ্যগত সনদ ছিল ও ছবি তোলার সময় তারা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি এও জানায়, ছবিগুলোতে শুধু সামান্য আলো ও রঙ সম্পাদনা ছাড়া অন্য কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
নিষিদ্ধ হওয়া দুটি বিজ্ঞাপন আগে জারার অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছিল। একটি ছিল ‘ছোট পোশাকের’ প্রচারণা, যেখানে মডেলের পা ‘অস্বাভাবিকরকম সরু’ দেখানোর জন্য ছায়া ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করে এএসএ। এছাড়া মডেলের বাহু ও কনুইয়ের ভঙ্গি তাকে ‘অস্বাভাবিকভাবে চিকন’ বলে উপস্থাপন করেছে।
অন্য বিজ্ঞাপনটি ছিল একটি শার্টের জন্য। সেখানে মডেলের গায়ের ভঙ্গিমা ও জামার ডিজাইন এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়, যাতে তার কলারবোন ছিল মূল আকর্ষণ।
অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো অভিযোগ পাওয়া না গেলেও তারা নিজেরাই এগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। জারা অবশ্য নিষিদ্ধ ঘোষণার আগেই সব বিতর্কিত ছবি সরিয়ে নিয়েছে।
জারা দাবি করেছে, তারা যুক্তরাজ্যের মডেল হেলথ ইনকোয়ারির ২০০৭ সালের প্রতিবেদন ফ্যাশোনিং এ হেলদি ফিউচারের সুপারিশ অনুসরণ করে। বিশেষ করে, তৃতীয় সুপারিশটি, যেখানে বলা হয়- মডেলদের অবশ্যই এমন চিকিৎসকের স্বাস্থ্যসনদ থাকতে হবে, যিনি খাওয়াদাওয়ার ব্যাধির লক্ষণ শনাক্তে দক্ষ।
এর আগেও একই কারণে যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এম&এস) ও নেক্সট’র বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে এএসএ। জুলাই মাসে এম&এস’র এক বিজ্ঞাপনে মডেলকে ‘অস্বাস্থ্যকরভাবে রুগ্ণ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, বড় আকৃতির জুতা ও কাপড়ের ভঙ্গি মডেলের ‘অতিরিক্ত সরু পা’ আরও স্পষ্ট করে তুলেছিল।
নেক্সট’র ক্ষেত্রেও একই রকম অভিযোগ ওঠে। একটি নীল রঙের স্কিনি জিন্সের বিজ্ঞাপনে মডেলের পাকে সরু দেখাতে ক্যামেরার বিশেষ অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ করে এএসএ। তবে নেক্সট এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়নি এবং দাবি করেছে, মডেলটি ‘চিকন হলেও সুস্থ ও ফিট’।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞাপন পর্যবেক্ষক সংস্থার এই কঠোর অবস্থানকে অনেকে স্বাগত জানালেও, জনমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে- যদি অতিরিক্ত রুগ্ণ মডেল দেখানো বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হয়, তবে ‘অস্বাস্থ্যকরভাবে অতিরিক্ত মোটা’ মডেল দেখানো বিজ্ঞাপন কেন নিষিদ্ধ হয় না? সামাজিকমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ