দেশজুড়ে

নবীন না প্রবীণ কারা আসছে রাজশাহী নগর বিএনপির নেতৃত্বে

দেড় দশক পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির বহুল প্রতীক্ষিত সম্মেলন হতে যাচ্ছে রোববার (১০ আগস্ট)। এ নিয়ে শহরের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। দীর্ঘদিন পর হতে যাওয়া এই সম্মেলনে নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নতুন কমিটিতে নবীনদের জোয়ার নাকি পুরোনোদের হাতেই থাকবে হাল, এ প্রশ্নও ঘুরছে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত।

শীর্ষ নেতারা বলছেন, মহানগরীতে বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে নেতৃত্ব বাছাইয়ে সরাসরি নজর রাখছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জাতীয় নির্বাচনের আগে এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একঘেয়েমি টাইপের নেতৃত্ব দেওয়া সিনিয়রদের বিশ্রামে পাঠানো হতে পারে। দলকে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় শক্তিশালী করতে এবার তরুণ নেতাদেরই গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হতে পারে। ফলে মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে ঘটতে পারে নয়া মেরূকরণ।

দলীয় সূত্র জানা গেছে, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশাকে আহ্বায়ক ও মামুনুর রশিদ মামুনকে সদস্যসচিব করে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর প্রায় সাড়ে তিন মাস পর আহ্বায়ক কমিটির পরিধি বাড়িয়ে ৬১ সদস্যে উন্নীত করা হয়। তারপর থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে আহ্বায়ক কমিটিতেই চলছে রাজশাহী মহানগর বিএনপি।

এদিকে সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক তৎপরতায় ব্যস্ত সময় কাটছে নেতাকর্মীদের। নগরীর বিভিন্ন সড়ক সেজেছে ফেস্টুন আর ব্যানারে। নির্মাণ করা হচ্ছে গেটও। দীর্ঘ অপেক্ষার পর রোববারের এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন।

এছাড়া আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঐক্যের বার্তা দেবেন বলে দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

দলীয় সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন পর নগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের জেল-জুলুমের শিকার নেতাকর্মীরা কাজ করছেন নব উদ্যমে। পরিবর্তনের স্রোত আর অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতার এই লড়াইয়ে রাজনৈতিক মহল তাকিয়ে আছে আগামীকালের সিদ্ধান্তের দিকে। কমিটি গঠনে প্রজন্মের ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা থাকলেও অভ্যন্তরীণ সমীকরণে শেষ মুহূর্তে চমক আসতে পারে।

এদিকে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নগর বিএনপির নতুন নেতৃত্ব চূড়ান্ত করতে সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে মহানগরের প্রতিটি ইউনিটে কর্মীসভা, মতবিনিময় ও প্রচার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নেতৃত্ব নির্বাচনে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোট অথবা সবাই মিলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ওপর দায়িত্ব দিতে পারেন বলে গুঞ্জন উঠেছে।

তবে সম্মেলনে পদের বিষয়ে সরাসরি মুখ না খুললেও উচ্চপর্যায়ে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন পদ প্রত্যাশীরা। আসন্ন কমিটিতে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক পদে নবীন মুখ আসতে পারে বলে ধারণা তৃণমূলের। এর মধ্যে সভাপতি পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের একাদশ সংসদ নির্বাচনের ধানের শীষের প্রার্থী ও নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন।

সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ওয়ালিউল হক রানা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট, নগর যুবদলের আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা মাহফুজুর রহমান রিটন।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, রাজশাহী বিএনপির নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মূল্যবান নির্দেশনা পেতে উন্মুখ হয়ে আছেন। দলকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতেই সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন আহ্বায়ক কমিটি আছে। যখন রেগুলার কমিটি হবে, তখন দল চাঙা হবে। গণতান্ত্রিকভাবে যাকে নির্বাচিত করা হবে, তিনিই নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এবার প্রায় ৭০০ কাউন্সিলর থাকছেন। আশা করছি এ সম্মেলনের পর দলের সব বিভক্তি কেটে যাবে।

সাবেক ছাত্রনেতা ও যুবনেতা আবুল কালাম আজাদ সুইট বলেন, আমরা আনন্দিত অনেকদিন পর দলের সম্মেলন হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত করানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু সম্মেলন নিয়ে এক প্রকার হতাশাও কাজ করছে। সম্মেলন কড়া নাড়লেও এখনো পর্যন্ত তফসিল হয়নি, থানা কমিটিগুলো অনুমোদন হয়নি, কারা ভোটার, কতজন ভোটার সেটাও জানি না। সব মিলে অন্ধকারের মধ্যে আছি।

রাজশাহী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় দলের সঙ্গে কাজ করছি। আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছি, দলকে আগলে রেখেছি, দলের নেতাকর্মীরা যদি সমর্থন দেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান যদি দায়িত্ব দেন তাহলে দলকে সুসংহত করতে বিগত দিনের মতোই কাজ করবো ইনশাআল্লাহ।

এদিকে মিডিয়া সেল উপ-কমিটির এক ব্রিফিংয়ে অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, সাবেক বর্তমান কাউকে বাদ দিয়ে নয়, ঐকমত্য ও সবার সম্মতিতে কাউন্সিল হবে। এই সম্মেলনে সাবেক বর্তমানের সিনিয়র-জুনিয়র সবাই থাকবেন। বিএনপির এই সম্মেলন হবে উৎসবমুখর। মিলনমেলায় পরিণত হবে এটা। রাজশাহী মহানগরীর সাংগঠনিক সাতটি থানা ও ৩৫টি ওয়ার্ডের সব কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসহ সব নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবেন।

রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত বলেন, আমরা নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে সম্মেলনের আয়োজন করেছি। এই সম্মেলন সফল করতে বিভিন্ন উপ-কমিটি করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে সেগুলো সমন্বয় করছি।

তিনি আরও বলেন, সম্মেলন দলের চলমান প্রক্রিয়া, আমরা মনে করি এ সম্মেলনকে ঘিরে দল চাঙা হবে ও নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন গতি আসবে। নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের ৭৬৮ জন কাউন্সিলর ভোট দিতে পারেন আবার তারা সমঝোতার মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করলে তিনি কমিটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সাখাওয়াত হোসেন/এমএন/এমএস