বগুড়া শহরের প্রধান পাইকারি বাজার রাজাবাজার এবং তার পাশে অবস্থিত খুচরা বাজার ফতেহ আলী বাজার। এই দুই বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দামে এখন বিস্তর ফারাক। গত দুই সপ্তাহে দুটি বাজারেই সবজির দাম বাড়লেও ফতেহ আলী বাজারে মূল্যবৃদ্ধি আরও বেশি। এতে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা।
বুধবার (২০ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে রাজাবাজারে যে বেগুন ৭০-৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো, এখন তা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে। অন্যদিকে, ফতেহ আলী বাজারে দাম প্রায় একই। পটোলের দাম রাজাবাজারে ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ফতেহ আলী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। একইভাবে, ঢ্যাঁড়শ রাজাবাজারে ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও ফতেহ আলী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
করলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। রাজাবাজারে যা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ফতেহ আলী বাজারে তা ১২০ টাকা ছুঁয়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। রাজাবাজারে ১৪০ টাকা থেকে বেড়ে ২২০-২৪০ টাকা হয়েছে। ফতেহ আলী বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়। পেঁয়াজের দামও দুই বাজারে প্রায় একই। ৬০-৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে কিছু সবজির দাম উভয় বাজারেই কিছুটা কমেছে। শসা রাজাবাজারে ৪০-৫০ টাকা এবং ফতেহ আলী বাজারে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে, কচুর মুখির দামও কমেছে।
বাজারের এমন ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ক্রেতারা। ফতেহ আলী বাজারে সবজি কিনতে আসা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল কাফি বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি আগের চাইতে আরও খারাপ হচ্ছে। যে আশা নিয়ে মানুষ গণঅভ্যুত্থান করলো, তার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আমরা রিটায়ার করে কিছু পয়সা পেয়েছি। সাধারণ মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তারা কী করবে? মানুষ বলছে সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট কী জিনিস? কোথায় আছে এটা? কোথায় পাওয়া যায়? এটিকে প্রথমে ভাঙতে হবে।’
একই বাজারে সবজি কিনতে আসা হান্নান জানান, সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যারা খুচরা বাজার থেকে কেনাকাটা করেন, তাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
তবে রাজাবাজারে সুমন সরকার নামের একজন বিক্রেতার ভাষ্য, ‘সবজির বাজারে কোনো সিন্ডিকেট হয় না। বৃষ্টির কারণে জমিতে গাছ পচে যাচ্ছে, তাই সবজির আমদানি কম। আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি হলে দাম তো বাড়বেই।’
একই বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা মোহাম্মদ মুনজুরুল বলেন, ‘দেশে পেঁয়াজ আছে প্রচুর। নিয়মমতো চললে দামটা আর একটু কমতো।’
আরেক পেঁয়াজ বিক্রেতা জাহিদ বলেন, ‘পেঁয়াজের এখন শেষ সময়। শেষ সময়ে পেঁয়াজের দাম ৬০-৭০ টাকা কেজি মনে হয় না বেশি।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, ‘বৃষ্টি বা বন্যার কারণে সরবরাহে ঘাটতি থাকলে দাম বাড়তে পারে। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। যদি কেউ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসআর/জিকেএস