দোকানের সামনে নারী-পুরুষের ভিড়। কেউ বসা, কেউ দাঁড়ানো। হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে নারীদের হুড়োহুড়ি-ধাক্কাধাক্কি। সেখান থেকে খালি হতে সরে এলেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আলেয়া বেগম।
তবে শুধু আলেয়া বেগম নয়, ২৪ টাকা কেজি দরে আটা কিনতে সব সহ্য করছেন নিম্নআয়ের মানুষ। ভোর থেকে শুরু হয় অপেক্ষা। কড়া রোদের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকেন কখন পাবেন আটা। ধাক্কাধাক্কি, তর্কাতর্কি তো আছেই। বগুড়ার ধুনট পৌর এলাকায় ওএমএস ডিলারের দোকানের সামনে এমনই চিত্র দেখা গেলো।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, পৌর এলাকায় ডিলার রয়েছে ছয়জন। সপ্তাহে পাঁচদিন দুটি পয়েন্টে দিনে এক টন আটা বিক্রি করা হয়। খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির (ওএমএস) দোকানগুলো খোলে সকাল ৯টায়। কিন্তু ব্যাগ হাতে নিয়ে ভোরবেলা থেকেই লাইনে দাঁড়ান মানুষজন। এখানে প্রতিকেজি আটা বিক্রি হয় ২৪ টাকা দরে। প্রত্যেকে পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারেন। তবে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও অনেককে ফিরে যেতে হয় খালি হাতে।
পৌরসভার অফিসার পাড়ার মিনারা বেগম, ভরনশাহীর সামিনা খাতুন, বিলকিস বেগম ও জামাল উদ্দিনসহ অনেকে জানান, বাজার থেকে উচ্চ মূল্যে আটা কিনে খাওয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এজন্য একটু কম দামে তারা আটা কিনতে এসেছেন। তবে অনেক ধকল সহ্য করতে হয় আটা নিতে।
কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মধ্যবয়সী এক নারী। তিনি দুদিন ধরে ওএমএসের আটা কিনছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, ‘আগে কখনো ভাবিনি আটা কিনতে লাইনে দাঁড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় স্বামীর আয়ে সংসার চলছে না। কমদামে ওএমএসের আটা কেনা ছাড়া কোনো উপায় নেই। খুব অভাবে আছি।’
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। ওএমএস আটার যে বরাদ্দ দিচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় একবারেই অপ্রতুল। অর্ধেক মানুষও আটা পায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আটা না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হয় অসংখ্য নিম্নআয়ের মানুষকে। মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে তিনি ওএমএসের আটা বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি চাল সরবরাহের দাবি জানান।
ধুনট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাজেদুল ইসলাম বলেন, পৌর এলালায় দুটি পয়েন্টে বর্তমানে এক টন আটা বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এই বরাদ্দ অপ্রতুল। বরাদ্দ বাড়িয়ে চার টনের চাহিদাপত্র খাদ্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এসআর/জেআইএম