মালয়েশিয়ায় মানবপাচার ও ১ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সাবেক সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইনের (তসলিম) প্রতিষ্ঠানসহ ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০ (বি)/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/৪২০/৪০৯ ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগে বলা হয়, ১৩টি ওভারসিজ কোম্পানির চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালকসহ অন্য আসামিরা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনকালে সিন্ডিকেট করে বায়রার রেজিস্ট্রেশনের শর্ত ভঙ্গ করেছেন।
আরও পড়ুন
২০ লাখে ইতালি নেওয়ার কথা বলে মিশরে নিয়ে মুক্তিপণ দাবি, গ্রেফতার ৫ স্ত্রীসহ বগুড়ার সাবেক এমপি রিপুর বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞাআসামিরা বিভিন্নভাবে সরকারি দলের বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার ৫ গুণ টাকা বেশি নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তির আওতায় শ্রমিক রিক্রুটের জন্য এজেন্ট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে মালয়েশিয়ায় চাকরি নির্দিষ্ট প্রস্তাবে বিপরীত শ্রমিক প্রেরণের জন্য নির্ধারিত বাছাই ও অর্থসংশ্লিষ্ট শর্ত এড়িয়ে জনশক্তি/শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির ভিত্তিতে পরস্পর যোজসাজশে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্যে রিক্রটিং এজেন্সির প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়ে ও রিক্রুটেড শ্রমিকদের অবৈধভাবে ক্ষতিসাধন করে চুক্তির বাইরে বিভিন্ন ধাপে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যে অস্থায়ী দায়িত্ব সম্পাদনকালে সরকারদলীয় প্রভাব খাটিয়ে আসামিরা যোগসাজশ ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে নিম্নরূপে চুক্তিবদ্ধ আইনসংগত পারিশ্রমিক ব্যতীত অবৈধ পারিতোষিক সুবিধা ও অবৈধ অর্থ গ্রহণ এবং চুক্তিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড করা ও চুক্তি মোতাবেক করণীয় কাজ থেকে বিরত থাকার পুরস্কার হিসেবে বায়রার প্রভাবশালী সদস্য হিসেবে সরকার দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার সুবিধা ব্যবহার করে অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ করেন। তারা অবৈধভাবে গৃহীত অর্থ অবৈধভাবে হস্তান্তর, স্থানান্তর, রূপান্তর করে পাচার করেন; যা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার নির্ধারিত ব্যয়ের চেয়ে ৫ গুণ অতিরিক্ত টাকা গ্রহণপূর্বক মালয়েশিয়ায় পাঠানো কর্মীর কাছ থেকে পাসপোর্ট, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং প্রতি কর্মীর কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকা গ্রহণপূর্বক ১ হাজার ১৫৯ কোটি ৮২ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেন।
এর আগে গত মার্চে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার ও ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও তার পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
রোববার অনুমোদিত মামলার আসামিরা হলেন- আকাশ ভ্রমণ ওভারসিজের মালিক মনসুর আহমেদ কালাম; প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। উইনার ওভারসিজের মালিক মাহফুজুল হক ও রহিমা হক; এই প্রতিষ্ঠান ৫৯ কোটি ৮৩ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগে বলা হয়। শাহীন ট্রাভেলসের মালিক ও হাবের সাবেক সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন (তসলিম); প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ১২৩ কোটি ৯৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। নাভিরা লিমিটেডের এমডি শেখ মোহাম্মদ শাহিদুর রহমান, মাহবুবুর রহমান ও মো. শামীম হাসান; প্রতিষ্ঠানটি ৮১ কোটি ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগে বলা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, আদীব এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস ১৩২ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. কে এম মোবারক উল্লাহ, মো. আবুল কালাম আজাদ, নওশাদ আরা আক্তার, হাছনা আক্তার আজাদকে আসামি করা হয়েছে।
ইউনাইটেড ম্যানপাওয়ার কনসালটেন্স লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৫৯ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জেড ইউ সায়েদ, নাজমা আক্তার, জুহানা সুবাইতা ও জিসান সায়েদকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রীণল্যান্ড ওভারসীজের বিরুদ্ধে ৭৯ কোটি ৬১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক রেহানা আরজুমান হাই আসামি হয়েছেন।
পি. আর. ওভারসিস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৭৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি গোলাম রাকিব ও ইমান আকতার পুনম।
জাহারাত এসোসিয়েট লি. এর বিরুদ্ধে ১১৬ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), নাহিদা আক্তার, রওশন আরা পারভিন ও একেএম মোশারফ হোসেন আসামি হয়েছেন।
অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে ৫৩ কোটি ২৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মহিউদ্দিন আহমেদ আসামি হয়েছেন।
মের্সাস জান্নাত ওভারসীজের মালিক লিমা বেগমের বিরুদ্ধে ৬৩ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মিডওয়ে ওভারসিস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ৬২ কোটি২৯ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি মোহাম্মদ রফিকুল হালদার ভূঁইয়া ও কাজী অদিতি রুবাইয়াত।
সাউথ পয়েন্ট ওভারসিস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১১২ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির এমডি মঞ্জুর কাদের, সাদিয়া মঞ্জুর, আহমেদ আতাউর রহমান, আহমেদ খালেদ লুবনানী ও আহমেদ ফয়সাল রমাদানীকে আসামি করা হয়েছে।
এসএম/ইএ/জিকেএস