আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান মুসলিম নেতাদের

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা। গত সপ্তাহে কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত জরুরি বৈঠকে এই আহ্বান জানান তারা।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কাতারে অবস্থানরত হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জরুরি বৈঠকে বসেন আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারা। প্রায় ৬০টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ যৌথ অধিবেশনে গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার সময়ে কাতারে হামলা চালানোর প্রতিক্রিয়ায় কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সব রাষ্ট্রকে আহ্বান জানানো হচ্ছে, তারা যেন ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বাধা দিতে সম্ভাব্য সব আইনি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে রয়েছে দখলদার দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা ও আইনি পদক্ষেপ নিতে শুরু করা।

কাতারের প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনসহ মিশর, জর্ডান ও মরক্কো, যেসব দেশ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে তারাও বৈঠকে উপস্থিত ছিল। তবে আব্রাহাম অ্যাকর্ডস স্বাক্ষরের পাঁচ বছর পূর্তিতে সোমবারের বৈঠকে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর শীর্ষ নেতারা আসেননি; তবে দেশগুলো উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ইসরায়েলের জাতিসংঘ সদস্যপদ স্থগিতের প্রচেষ্টা সমন্বয় করার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এদিকে, মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কাতার সফরে যাচ্ছেন ইসরায়েল সফরে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। সোমবার জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রুবিও বলেন, ইসরায়েলের ‘হামাস নির্মূলের লক্ষ্য’ পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দৃঢ় সমর্থন’ অব্যাহত থাকবে।

দোহায় হামলার পর ওয়াশিংটনের সঙ্গে উপসাগরীয় গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। বিশেষত, কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ সামরিক ঘাঁটিসহ অন্যান্য কৌশলগত সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, রুবিও কাতারের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করবেন।

কাতার জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলার পর আঞ্চলিক সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার সময় এসেছে। হামলাটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ উপসাগরীয় উপদ্বীপে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। সোমবারের বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল, ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা গাজার যুদ্ধ ও মানবিক সংকটের ইতি টানে।

বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে দোহায় হামাস প্রতিনিধিদের ওপর হামলা চালিয়েছে, যাতে যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

হামাস দাবি করেছে, তাদের শীর্ষ নেতারা এ হামলা থেকে বেঁচে গেছেন। তবে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আমির বলেন, যে পক্ষ আলোচনায় বসা প্রতিনিধি দলকে পদ্ধতিগতভাবে হত্যা করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্য আলোচনাকে ব্যর্থ করা ছাড়া আর কিছু নয়।

সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।

ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, যে কোনো দিন যে কোনো আরব বা ইসলামি রাজধানীর ওপর একই ধরনের হামলা হতে পারে। আমাদের সামনে বিকল্প স্পষ্ট- আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধে তার দেশ কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতেও পাল্টা হামলা চালিয়েছিল।

মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেন, কাতারে ইসরায়েলের হামলা নতুন কোনো শান্তিচুক্তির সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করেছে ও বিদ্যমান শান্তিচুক্তিগুলোও ভেস্তে যাওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে।

ইসরায়েল ও এর প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসকে আরও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে, বিশেষত সৌদি আরবকে এই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বৈঠকে ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী মানসিকতা’ গ্রহণের অভিযোগ তোলেন। বৈঠকে একের পর এক দেশ গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানায়।

সম্মেলনের ফাঁকে উপসাগরীয় ধনী দেশগুলো পৃথক বৈঠকেও বসে। সেখানে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে আনতে তার প্রভাব ও চাপ প্রয়োগ করার আহ্বান জানায় বলে জানান উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) মহাসচিব জাসেম মোহাম্মদ আল-বুদাইউই।

সূত্র: আরব নিউজ

এসএএইচ