দেশজুড়ে

পঞ্চগড়ে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের আকাশে শীতের হাতছানি

পঞ্চগড়ে এখনই ভোরের আকাশে দেখা মিলছে ঘন কুয়াশা। মৌসুমী বায়ুর নিষ্ক্রিয়তার ফলে বয়ে যাচ্ছে উত্তরের হিমেল বাতাস। সকালের এই কুয়াশাচ্ছন্ন হিমেল পরিবেশ জানান দিচ্ছে শীতের আগমনি বার্তা। দুই-তিন দিন ধরেই এমন পরিবেশ বিরাজ করছে উত্তরে জেলা পঞ্চগড়ে।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) থেকে প্রতিদিন ভোরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘন কুয়াশা দেখা গেছে। সকাল ৭টা পর্যন্ত এসব এলাকার চারপাশ ঢেকে থাকে কুয়াশার আবরণে। তবে সকালের পর থেকে রোদের কারণে দিনে বেশ গরম অনুভূত হয়।

শীতের জেলা হিসেবে পরিচিত পঞ্চগড়ে সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই শীতের আমেজ শুরু হয়। আর ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কনকনে শীত অনুভূত হয়। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে কমতে থাকে শীতের প্রকোপ। এবার শীত মৌসুম শুরুর আগেই শরতে মেঘলা আকাশ এবং মাঝে মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাতে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে জেলায় দিনে ২৮ থেকে ২৯ এবং রাতে ২৪ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। রাতে গায়ে হালকা কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। এছাড়া ভোরের ফসলের মাঠ, ঘাস আর গাছগাছালির ওপর জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দেয় শীতের আগমনি বার্তা।

পঞ্চগড়ের শীতকালীন আবহাওয়া স্থানীয়দের কাছে বেশ সুপরিচিত। প্রতি বছর শীতের শুরুতেই এ জেলার নদী, খাল-বিল, পথ-ঘাট, ফসলের মাঠ, গ্রামাঞ্চলের কাঁচাপাকা সড়ক কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে এক নতুন রূপ নেয়। গ্রীষ্মকালীন গরমের পর শীতের হাওয়া সবকিছুতে যেন এক প্রশান্তি এনে দেয়। বর্ষা যেতে না যেতেই আগাম শীতের শীতল হাওয়া এখানকার প্রকৃতিকে সতেজ করে তোলে। প্রতি বছরের মতো এবছরও পঞ্চগড়ে আগেভাগেই শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। শীতের আগমনি বার্তায় শুরু হয়েছে শীতকালীন সবজিসহ গম, আলু চাষ। শীতের আগমনে এখানে সূর্য ওঠার পরও কুয়াশা এবং মিষ্টি শীতল বাতাস প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।

সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কমে গিয়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে স্থানীয়দের শীতের পোশাক পরার প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে রাতে এবং ভোরের দিকে মোটরসাইকেল চালকরা গরমকাপড় পরতে শুরু করেছেন। জেলা শহরের লেপ-তোশকের দোকানেও ব্যবসায়ীদের নানা রকম প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে।

এদিকে হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগবালাই। বিশেষ করে ঘরে ঘরে সর্দি, জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু ও বয়ষ্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত রোগে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী শীতজনিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা বলছেন আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এই সময় এমন সর্দি, জ্বরসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপ স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন-

আজকের আবহাওয়া: ঢাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারেলবণের বিষে অস্তিত্ব সংকটে উপকূলের কৃষিজলবায়ু বিপর্যয়ে কখনো পুড়ছে কখনো ডুবছে সিলেট

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি বছর আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময় জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমনিয়াসহ নানান রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। বর্তমানে বলা যায় ঘরে ঘরে সর্দি, জ্বরের রোগী। প্রতিদিন হাসপাতালে অসংখ্য রোগী এমন অসুস্থতা নিয়ে আসছেন। এই সময়ে বিশেষ করে শিশু ও বয়ষ্কদের বাসি ও ঠান্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্ধ্যার পর কাজ ছাড়া বাইরে না থাকাই ভালো। এই সময় সময় সবার মাস্ক পরাও জরুরি বলে জানান এই চিকিৎসক।

জেলা শহরের লেপ-তোশক ব্যবসায়ী মনছুর আলম বলেন, এই সময় আমাদের শীতকালীন কাপড় মজুদের উপযুক্ত সময়। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে শীতের পোশাকের সঙ্গে লেপ-তোশকের তুলাসহ কাপড়ের দাম বেড়ে যায়। এছাড়া ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে তখন বাইরে থেকে কাপড়সহ বিভিন্ন প্রকার তুলা আনা কষ্টকর হয়। এজন্য শীতের শুরুতেই আমরা এসব পণ্য মজুতের চেষ্টা করি।

পঞ্চগড় উপজেলা সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মারুপাড়া গ্রামের আল আমিন বলেন, সময় হিসেবে শীত আসতে আরও বেশ কিছু সময় দেরি আছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি যেন শীত নামিয়ে দিল। এছাড়া ভোরে ঘুম থেকে উঠলে দেখা যায় চারপাশ যেন ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। কুয়াশার সঙ্গে হালকা বাতাসে শীত অনুভূত হয়। রাতে হালকা কাঁথা নিয়ে ঘুমাতে হয়।

জেলা শহরের ডোকরোপাড়া মহল্লার রাইজুল ইসলাম বলেন, আমরা করতোয়া নদীর পাশে বসবাস করি। প্রতিদিন ভোরে কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ দেখি। সকাল ৭-৮টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। বৃষ্টি হলেই শীত শীত লাগে। তবে দিনে রোদ উঠলে গরম লাগে। সকালে আমাদের চারপাশে বেশ কুয়াশা থাকে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, প্রতি বছর এই এলাকার গরিব মানুষের কষ্ট হলেও শীত নিয়ে জেলার মানুষের একটা প্রস্তুতি থাকে। এখানে সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকে শীতের আমেজ শুরু হয়। এবার বর্ষার পরও থেকে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির মধ্যে কেমন যেন শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমাতে গেলেও মাঝরাতে ঠিকই কাঁথা নিতে হয়।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, বর্তমানে মৌসুমী বায়ু নিষ্ক্রিয় হওয়ায় উত্তর দিক থেকে পাহাড়ি হিম শীতল বাতাস বয়ে চলেছে। এজন্য ভোরের দিকে কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টির জন্য আকাশও মেঘলা থাকছে। বৃষ্টি না হলে এবং আকাশে মেঘ থাকলেও কুয়াশা দেখা যায়। এজন্য রাত থেকে ভোর পর্যন্ত কিছুটা শীত অনুভূত হচ্ছে। মূলত ভোরের এই কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। আকাশের মেঘ কেটে গেলে দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এফএ/এমএস