জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় অধিবেশন কক্ষ বর্জন করেন অনেক দেশের প্রতিনিধিরা। সে সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অবস্থান কি ছিল সেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে বিপক্ষে নানা বিতর্ক চলছে। তবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অধিবেশন কক্ষেই উপস্থিত ছিল না।
জানা গেছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের চতুর্থ দিন নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় প্রথম বক্তা হিসেবে নেতানিয়াহুর নাম ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আসন ছেড়ে অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ (ওয়াকআউট) করেন। এদিন সপ্তম বক্তা হিসেবে জাতিসংঘে ভাষণ দেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেলা সাড়ে ১১টায় ভাষণ শুরু করেন তিনি। তবে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় অধিবেশন কক্ষে ছিল না বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কোনো সদস্য। শুক্রবার সকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যখন আমাদের অধিবেশন কক্ষে যাওয়ার সময় হয়েছিল আমরা তখনই গেছি। আমরা বসার কিছুক্ষণ পরেই প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের সময়টুকু আমরা সেখানে ছিলাম। তার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর আমরা বের হয়ে এসেছি। নেতানিয়াহুর বক্তৃতার সময় আমরা সেখানে ছিলাম না, আমরা গেছি পরে।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে চায় ভুটানযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সংবর্ধনায় ড. ইউনূস ও তার কন্যাস্বল্প সময়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে প্রবাসীদের অবদান রয়েছে
প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, নেতানিয়াহু যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল তখনও অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেনি। এ সময় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা জাতিসংঘের হেডকোয়ার্টারে উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু তারা সেসময় অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক নেতাদের ছবি দিয়ে নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সময় উপস্থিত থাকার কথা দাবি করে যে ছবিটি প্রচার করা হচ্ছে সেটি মূলত ড. ইউনূসের ভাষণের কিছুক্ষণ আগের ছবি। তার প্রায় এক ঘণ্টা আগেই বক্তৃতা শেষ করেন নেতানিয়াহু।
এদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সবসময় মানুষকে আশার বাণী শুনিয়েছি, কখনো ভয় দেখিয়ে কিছু করা আমি সমর্থন করিনি। কিন্তু আজ আমাকে সেখান থেকে সরে এসে ভয়ংকর কিছু কথা বলতে হচ্ছে। আজ আমি সতর্ক করছি চরম জাতীয়তাবাদ, অন্যের ক্ষতি হয় এমন ভূরাজনীতি, এবং অন্যের দুর্ভোগ ও পীড়নের প্রতি ঔদাসীন্য বহু দশকের পরিশ্রমে আমরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছি তা ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সবচেয়ে মর্মান্তিক চিত্র আমরা দেখছি গাজায় । শিশুরা না খেয়ে অকালে মৃত্যুবরণ করছে, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, হাসপাতাল, স্কুলসহ একটি গোটা জনপদ নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হচ্ছে। জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সঙ্গে আমরাও একমত যে আমাদের চোখের সামনেই একটি নির্বিচার গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে; আমাদের দুর্ভাগ্য যে মানবজাতির পক্ষ থেকে এর অবসানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্বের বিবেকবান নাগরিকদের পক্ষ থেকে আমি আবারও জোরালো দাবি জানাচ্ছি যে, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমারেখার ভিত্তিতে, যেখানে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকবে, তখনই ন্যায়বিচার সম্পূর্ণভাবে কার্যকর হবে।
আইএইচআর/এসএনআর/এমএস