মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
আসছে একুশে বইমেলা ২০২৫-২৬ নিয়ে আমার প্রত্যাশা হলো, এটি যেন সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক ও প্রযুক্তিনির্ভর এক মহোৎসব হয়। যেখানে পাঠক, লেখক এবং প্রকাশক সবার জন্য সমানভাবে আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরি হবে। জনপ্রিয় লেখকদের পাশাপাশি নবীন লেখকদের নতুন বই প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত।
বইমেলায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইতিহাস, ইসলামি জ্ঞান, সাহিত্য, শিশুসাহিত্যসহ সব বিষয়ের বই পাওয়া যাবে, এমন বৈচিত্র্য থাকা দরকার। অনুবাদগ্রন্থের সংখ্যা বাড়াতে হবে, যাতে বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পাঠকের সংযোগ তৈরি হয়। তবে ভুল বানান, নিম্নমানের কাগজ বা প্রচ্ছদ এড়াতে প্রকাশকদের আরও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। বই প্রকাশের আগে প্রুফরিডিং ও সম্পাদনার মান উন্নত করা উচিত।
মেলাপ্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত ময়লা ফেলার ঝুড়ি ও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ধুলা কমানোর জন্য প্রতিদিন পানি ছিটানোর ব্যবস্থা থাকা উচিত। সিসিটিভি ক্যামেরা, মেটাল ডিটেক্টর ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করতে হবে। হারানো জিনিস বা শিশুকে খুঁজে পেতে সহায়ক ‘হেল্প ডেস্ক’ স্থাপন জরুরি। প্রবেশ ও বাইরের গেট আলাদা করা উচিত। অনলাইন টিকিটিং ব্যবস্থা চালু করলে ভিড় অনেক কমানো সম্ভব।
পরিবার ও শিশুদের জন্য বিশ্রামের জায়গা এবং ছায়াযুক্ত বসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। বইপড়ার জন্য একটি শান্ত ‘রিডিং জোন’ রাখা দরকার। মেলার ভেতরে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত ওয়াশরুম থাকতে হবে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ওয়াশরুম থাকা জরুরি। স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যেন পাঠকেরা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
আরও পড়ুনঅমর একুশে বইমেলা শুরু ১৭ ডিসেম্বরআশা-নিরাশার বইমেলা
লেখক-পাঠকের সরাসরি যোগাযোগের জন্য বিশেষ স্থান নির্ধারণ করা উচিত। বই স্বাক্ষর ও আলোচনার সময়সূচি আগে থেকে জানালে পাঠকেরা প্রস্তুত হয়ে আসতে পারবেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বইয়ের গুরুত্ব নিয়ে প্রতিদিন সেমিনার বা আলোচনা অনুষ্ঠান হওয়া উচিত। নতুন লেখকদের জন্য প্রশিক্ষণমূলক কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে।
মেলার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে বইয়ের নাম, লেখক বা স্টল নম্বর দিয়ে খোঁজার সুবিধা থাকতে হবে। বিকাশ, নগদ বা অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট অপশন সক্রিয় রাখতে হবে। কিউআর কোডের মাধ্যমে বই কেনার সুবিধা চালু করা যেতে পারে। যারা সরাসরি আসতে পারবেন না, তারা যেন অনলাইনে অনুষ্ঠান বা বইমেলা দেখতে পারেন।
শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার থাকবে। যেখানে শিশুসাহিত্য, গল্প বলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি হবে। নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নজরদারি থাকবে। বিদেশি প্রকাশক ও লেখকদের আমন্ত্রণ জানালে এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বইমেলায় রূপ নিতে পারে। অনুবাদ সেশন এবং বিদেশি সাহিত্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা দরকার।
লেখক: কথাশিল্পী ও অনুবাদক।
এসইউ/এএসএম