নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের চারশ বছরের পুরানো হরিগঞ্জ খাল এখন সরু নালা। স্থানীয়দের দখল ও দূষণের ফলে খালটি বর্তমানে চেনার উপায় নেই। ফলে একপ্রকার নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে প্রায় দেড় কিলোমিটারের এ খাল। এলাকাবাসীর দাবি, খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা হোক।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হরিগঞ্জ খালটির বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ ভরাট হয়ে বাড়িঘর ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে। একসময় এ খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। খালটি দিয়ে নিয়মিত ট্রলার ও নৌকা চলাচল করতো। খালটির আশপাশের ১৪-১৫ জন প্রভাবশালী দখলদার অবৈধভাবে মাটি ভরাট ও গাইডওয়াল নির্মাণ করায় বর্তমানে নৌ চলাচল সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান স্থানীয়রা। খাল ভরাটের ফলে বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতার আশঙ্কাও স্থানীয়দের। তারা খালটি দখলমুক্ত করতে উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জানিয়েও ফল পাননি বলে অভিযোগ করেন।
আরও পড়ুন:
পর্যটনে অপার সম্ভাবনায়ও উপেক্ষিত সাতক্ষীরাযাতায়াত দুর্ভোগে ৪০ শতাংশ পর্যটক কমেছে সিলেটে
স্থানীয়দের তথ্য মতে, ওই এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান সুমন, মনির হেসেন,মাওলানা সানাউল্লাহ নুরী, কামাল হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, সামসুল হক ভূইয়া, কবির হোসেন, ফয়েজ সরকার, আল আমিন সরকার ও কবির হোসেনসহ আরও কয়েকজন খালটি দখল করে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী দোকানপাট, সিএনজি গ্যারেজ ও বাড়ি বানিয়েছেন। তাদের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মুখ খুলতে চান না এলাকার মানুষ। খাল দখলের প্রতিবেদনের জন্য ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতেও অস্বীকৃতি জানান তারা।
জানা যায়, হরিগঞ্জ খালটি অন্তত ২৫-৩০ ফুট প্রশস্ত ছিল। বর্তমানে এটি ৬-৮ ফুটে দাঁড়িয়েছে। মেঘনা নদীতে বয়ে যাওয়া এ খালটি দখলের ফলে আনন্দবাজার, দামোদরদী, দক্ষিণ দামোদরদী, হরিগঞ্জ, টেঙ্গারচর, বসনদরদী, পঞ্চবটি, উত্তর খংসারদী, বাগেরপাড়া, হামছাদী ঢাকারবনসহ প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন।
আরও পড়ুন:
লবণের বিষে অস্তিত্ব সংকটে উপকূলের কৃষিজলবায়ু বিপর্যয়ে কখনো পুড়ছে কখনো ডুবছে সিলেট
হরিগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী খালটি ৪০০ বছরের। এ খাল দখলের উৎসব চলছে। এ খাল দিয়ে এক সময় ট্রলার চলাচল করলেও এখন সেটা আর সম্ভব না। খালটি এখন সরু হয়ে গেছে। প্রশাসনও খাল দখলের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। একাধিকবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।’
পঞ্চবটি গ্রামের মামুন রহমান জানান, ‘এ খালটি পুরোপুরি দখল হলে আশপাশের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ জলাবদ্ধতার শিকার হবেন। সরকারি সম্পত্তি প্রশাসনের নজরদারির অভাবে চোখের সামনে দখল হয়ে যাচ্ছে, অথচ তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। দ্রুত খালটি দখল মুক্ত করা দরকার।’
খাল দখলের বিষয়ে অভিযুক্ত মনির হোসেন নামে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি খালের পাশের জায়গার মালিক। তাই বাড়ির পাশের কিছু জায়গা দখল হয়েছে। তবে সরকারের প্রয়োজনে জায়গা ফেরত দেওয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ তৌফিকুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুতই খালটি পরিদর্শন করবো। তবে আমি নায়েবের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, খালটি কচুরিপানা ও গাছপালা দিয়ে সরু হয়ে গেছে কিন্তু দখল হয়নি। পরিস্কার করে স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেবো।
এ বিষয়ের বক্তব্য জানতে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা রহমান বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। খোঁজ নিচ্ছি, যদি দখল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেটি উদ্ধার করা হবে ও দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. আকাশ/এমএন/এমএস