ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশে পাঁচটি স্পটে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। ছড়িয়ে পড়ে ১২ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত। এতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে দেশের উত্তর- পূর্বাঞ্চলের ১২-১৩টি জেলার মানুষ এ সড়কপথে যাতায়াত করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের প্রায় ১৮ কিলোমিটার রাস্তা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে গেছে। এর ভেতর ভুলতা গাউছিয়া থেকে কাচপুর পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক যানজটপ্রবণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ ও গর্তে গাড়ি আটকে যাওয়া, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করাসহ বিভিন্ন কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ১২ কিলোমিটার সড়কের এই অংশে পাঁচটি চিহ্নিত স্পট থেকে প্রতিনিয়তই তৈরি হচ্ছে যানজট। হরহামেশাই বিস্তৃত হচ্ছে মাইলের পর মাইল।
কখনো কখনো ছড়িয়ে পড়ছে ১০-১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ ও পরিবহন শ্রমিকদের দুর্দশা আর ভোগান্তি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগ সয়েই পথ পাড়ি দিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশে যানজটের নেপথ্যে রয়েছে পাঁচটি স্পট। যেখান থেকে প্রতিদিনই থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এই পাঁচটি স্পট হলো বরাবো বাসস্ট্যান্ড, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, বরপা বাসস্ট্যান্ড, আউখাব গার্মেন্টস ও ভুলতা গাউছিয়া গোল চত্বর। তবে অন্যতম যানজট সৃষ্টিকারী স্পট হচ্ছে বরাবো বাসস্ট্যান্ড। সড়কের খানাখন্দ আর উভয় দিকের লিংক রোডের মুখে লেগুনা, ইজিবাইক ও রিকশার জটের কারণে যানজট হচ্ছে।
রূপসী বাসস্ট্যান্ডে কাঞ্চন সড়কে শত শত মালবাহী ট্রাক, অটোরিকশা মহাসড়কে ঢুকছে ও বের হচ্ছে। এতে মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো আটকা পড়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
মহাসড়কের বরপা বাসস্ট্যান্ডে বরপা-মহজমপুর সড়কের মুখে ১০০ গজের ভেতর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রবেশমুখ বন্ধ করে গড়ে উঠেছে কয়েকটি স্ট্যান্ড। মহাসড়কের লিংক রোডের পশ্চিম পাশে লেগুনা স্ট্যান্ড, বরপা-মহজম সড়কের মুখে দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে ইজিবাইক স্ট্যান্ড। পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবহনের স্টপেজের কারণেও থেমে যানজট তৈরি হচ্ছে।
আউখাব এলাকায় কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক পারাপারে দিনে ৪-৫ বার মহাসড়ক আটকে দেওয়া হয়। এখান থেকে যানজট সৃষ্টি হয়ে মাঝেমধ্যেই মাইলের পর মাইল বিস্তৃত হয়। গোলাকান্দাইল থেকে ভুলতা গোলচত্বর পর্যন্ত মহাসড়কের অনেকটা জায়গা দখল করে হকাররা অস্থায়ীভাবে ব্যবসার পসরা বসানোয় সারাদিনই এখানে লেগে থাকে যানজট।
ভুলতা ফ্লাইওভার চালুর পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারী দূরপাল্লার গাড়িগুলো ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে যাওয়ায় যানজট অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু হকাররা ব্যবসার নামে মহাসড়ক দখল করায় ভুলতা গাউছিয়ার যানজট যেন স্থায়ী রূপ নিতে বসেছে।
এসব স্পট থেকে হরহামেশাই যানজট সৃষ্টি হয়ে কাচপুর থেকে ভুলতা গাউছিয়া পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজটপ্রবণ স্পটগুলোর একটা থেকে অন্যটির দূরত্ব দেড় থেকে আড়াই কিলোমিটার। কাচপুর থেকে ভুলতা গাউছিয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক তিনটি হাইওয়ে পুলিশ বক্স দেখভালে নিয়োজিত থাকলেও কাজের কাজ হচ্ছে না কিছুই। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, জনবল সংকটের কারণেই সামাল দেওয়া যাচ্ছে না যানজট।
আরও পড়ুনব্রিজ পার হতেই লেগে যায় তিন ঘণ্টা!পূজার ছুটিতে ভোগাবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়করাজধানীর ৭০ মোড়ে পরিবর্তন, গতি ফিরছে সড়কে
একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ঢাকার হেড অফিসে চাকরি করেন আবু রায়হান। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়েই তার যাতায়াত। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছু করার নেই। যানজটের ভোগান্তি মাথায় নিয়েই যাতায়াত করি। এ থেকে কবে নিস্তার পাবো জানি না।’
মেঘালয় পরিবহনের চালক বুলবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ৪-৫টি ট্রিপ হওয়ার কথা থাকলে যানজটের কারণে প্রায় দিনই ৩-৪ ট্রিপের বেশি হয় না। গোলাকান্দাইল গোল চত্বর থেকে ভুলতা গাউছিয়া গোল চত্বর পর্যন্ত দুই পাশেই মহাসড়ক দখল করে হকাররা বাজার বসায়। কয়দিন প্রশাসন উচ্ছেদ চালায়, পরে আবারও যেই লাউ সেই কদু।’
কর্ণগোপ এলাকার একটি কারখানার মালামাল আনা-নেওয়া করেন মালবাহী কাভার্ডভ্যান চালক শিহাব উদ্দিন। এ সড়কে দিনে বেশ কয়েকবার আসা-যাওয়া করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, ‘বরপায় মহজমপুর সড়কের মুখে অটোরিকশা ও লেগুনা স্ট্যান্ডের কারণে লিংক রোডে গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন আটকে যায়। মহাসড়কের রূপসী বাসস্ট্যান্ডেও একই অবস্থা। কাঞ্চন লিংক রোডে গাড়ি ওঠানামার সময় মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন আটকে যায়।’
চালক আব্দুল করিম বলেন, ‘ঢাকা থেকে নরসিংদী যেতে আমার এক ঘণ্টা সময় লাগার কথা। তবে ভুলতা গাউছিয়া আসতেই লেগেছে দুই ঘণ্টা। বিশ্বরোড গোল চত্বর থেকে বরাবো পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দ আর গর্তে বেহাল অবস্থা।’
তিনি বলেন, ‘ফলে ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে আসা গাড়িটি এখানে এলে ১০-১৫ কিলোমিটার গতিতে চলতে হয়। এর ওপর রয়েছে উভয় দিকের লিংক রোডের মুখে লেগুনা, ইজিবাইক ও রিকশার অবাধ বিচরণ। বেশিরভাগ সময় এখান থেকেই যানজটের উৎপত্তি হয়ে অন্যান্য যানজট স্পটগুলোর সঙ্গে একাকার হয়ে যায়।’
শিমড়াইল ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারাবো বিশ্বরোড গোলচত্বর থেকে বরাব বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কে খানাখন্দে বেহাল অবস্থা। যানবাহনের চাপের তুলনায় সড়কের প্রস্থও তুলনামূলক কম। এখানে এসে যানবাহনের গতিবেগ কমিয়ে ফেলতে হয়। ফলে দীর্ঘ লাইন লেগে যায়। এর ওপর মাঝেমধ্যেই সড়কে গাড়ি বিকল হয়ে যায়। তবে মহাসড়ককে স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশ নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ পরিদর্শক মুফাখখির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ভুলতা গাউছিয়া থেকে কাচপুর পর্যন্ত এই পাঁচটি স্পট থেকেই যানজটের সূত্রপাত ঘটে। আমরা সার্বক্ষণিকই চেষ্টা করি যাতে যানজট বিস্তৃত না হয়।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট বিভিন্ন কারণে হচ্ছে। খানাখন্দ তেমন কোনো সমস্যা নেই। আমরা গত সপ্তাহে ভিজিট করে এসেছি। যানজট হচ্ছে মূলত সড়ক কম প্রশস্ত হওয়ার কারণে। আমরা প্রস্থ বাড়ানোর কাজ শুরু করেছি। সড়কটি চওড়া হয়ে গেলে আর যানজট সৃষ্টি হবে না বলে আশাবাদী।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা জাগো নিউজকে বলেন, কিছুদিন আগেও যানজটের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় আমরা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করেছিলাম। এরপর আর যানজটের খবর পাইনি। যেহেতু আপনি বলেছেন, আমরা তড়িৎ গতিতে যানজট সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
ডিসি আরও বলেন, মহাসড়ক উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এটা সম্পন্ন হয়ে গেলে আশা করি যানজট সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
এসআর/জিকেএস