সড়কে পিচের চিহ্ন নেই, উঠে গেছে ইট-পাথর-সুরকি। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। এতে দুভোর্গে পড়েছে এই সড়ক নির্ভর ১৫টি গ্রামের অন্তত ৭০ থেকে ১ লাখ মানুষ। তবুও বছরের পর বছর সংস্কারহীন পড়ে আছে ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী লক্ষ্মীকুন্ডা ও পাকশী ইউনিয়নের ১৭ কিলোমিটার সড়ক।
জানা গেছে, নদী রক্ষা বাঁধ থেকে পরবর্তীতে এটি সড়কে রূপান্তর হয়। তবে ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কটিতে এখন বড় বড় গর্ত ও খানাখন্দে ভরা। ফলে এ পথ দিয়ে এখন রিকশা, ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তাই কয়েক কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষদের।
এছাড়া সড়কের এই অবস্থার জন্য সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে নিতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক কৃষক ভাঙ্গা সড়কে মালামাল বহনের ঝামেলা এড়াতে জমিতেই পাইকারদের কাছে তুলনামূলক কম মূল্যে কৃষি পণ্য বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ৯০ দশকে এক লেন বিশিষ্ট এ পাকা সড়ক নির্মাণ করে স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৪ সালে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়নে ১৮ ফুট প্রশস্ত করে দুইলেন বিশিষ্ট সড়কে রূপান্তর করা হয়। এ সড়ক প্রথমে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরে এলজিইডি ও বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছে। তবে ২০১৯ সালের পর থেকে এ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাঁধের ওপর নির্মিত এ সড়কে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা, কামালপুর, নূরুল্লাপুর, চরকাতরা, বহরামপুর, পাকুড়িয়া, রূপপুর, চররূপপুর, দাদাপুর, কৈকুন্ডা, বিলকেদার, চরকুরুলিয়া, পাবনা সদর উপজেলার চরভবানীপুরসহ ১৫ গ্রামের মানুষ চলাচল করে। এ অঞ্চলের কমপক্ষে ৭০ থেকে ১ লাখ লোক বসাবস করেন। তাদের সবার চলাচলের একসময় প্রধান সড়ক ছিল এটি।
আরও পড়ুনমাওনা-কালিয়াকৈর সড়কের ২০ বাঁক যেন মরণফাঁদবাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় ব্রিজে, দুর্ভোগে ২০ হাজার মানুষআধঘণ্টার বৃষ্টিতে ফেনী শহরে জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগ
পাকুড়িয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান সামিয়া জানান, এ সড়কের পাশেই আমাদের কলেজ। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে কলেজে যেতে হয়। সড়কের এখন এমন অবস্থা হয়েছে যানবাহন চলাচল করতেই পারে না। বৃষ্টি হলে কাদা-পানিতে পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করা যায় না। অনেক সময় কলেজে যাওয়ার পথে সড়কের কাদা-পানিতে কলেজের শিক্ষার্থীদের জামা-কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। এ সড়কটি জরুরির ভিত্তিতে সংস্কার করা প্রয়োজন।
লক্ষ্মীকুন্ডা এমপির মোড়ের ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ডাম্প ট্রাক ও ১০ চাকার বালু ও ইটবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে দ্রুত এই সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। এই সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ পথ দিয়ে এখন আর অটোবাইক, সিএনজি, রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করা করতে পারছে না। শুধুমাত্র ট্রাক ও ১০ চাকার ট্রাক চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে এসব ট্রাকও উল্টে যায় আবার গর্তে আটকে থাকে।
লক্ষ্মীকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) জিয়াউল ইসলাম বলেন, এ সড়কের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের কোনো অবস্থা নেই। পিচ ঢালা এ সড়কের আর কোথাও পিচ নেই। সড়ক জুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়ক সংস্কারের মতো অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের নেই। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ সড়ক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কেউ এতে সাড়া দেয়নি। কেউ এ সড়ক নির্মাণে সহযোগিতা করতে চায় না। দায়িত্ব নিতে চায় না।
পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনসুর আহমেদ বলেন, এ সড়কসহ আরও বেশ কয়েকটি সড়ক পুণঃনির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হলে সড়কটি পুনঃনির্মাণ করা হবে। তাছাড়া বর্তমানে এ সড়ক পুনঃনির্মাণের কোনো সুযোগ নেই।
শেখ মহসীন/এনএইচআর/জিকেএস