গান শুনতে ভালোবাসে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আমরা সবাই মায়ের ঘুমপাড়ানি গান শুনে বড় হয়েছি, তেমনি প্রেম বা বিচ্ছেদের গান শুনে আবেগাপ্লুত হয়েছি। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে গান শুনলে মন ভালো হয় তো বটেই, শরীর থাকে চাঙ্গা। নিয়মিত গান শুনলে মনের অসুখও কাছে ঘেঁষতে পারে না। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চাবিকাঠিও আছে গানের মধ্যেই।
আজ (১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক সংগীত দিবসে জেনে নেওয়া যাক নিয়মিত গান শুনলে শরীরের কী কী উপকার হতে পারে-
১. গান শুনলে উদ্বেগ কমবেযে কোনো বয়সের ক্ষেত্রে প্রশান্তিদায়ক গান শুনলে সেরোটোনিন ও অক্সিটোসিনের মতো হরমোন নিঃসরিত হয়। এসব হ্যাপি হরমোন আমাদের স্ট্রেস কমায়, মন ভালো রাখে। এছাড়া উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার অনুভূতি দূর করতে সাহায্য করে। ফলে মনের যত রোগব্যাধি তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
২. রক্তচাপ কমবেহৃদস্পন্দন, রক্তচাপ কমাতে ও আরামদায়ক অনুভূতি তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে গানের সুর। গান শুনলে মন যত ভালো থাকবে, হ্যাপি হরমোন ক্ষরণ যত বাড়বে, ততই শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে। শরীরে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রাও ঠিক থাকবে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর মিউজিক অ্যান্ড মেডিসিন, আটলান্টা জার্নালের বিভিন্ন গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে এমন সব তথ্য।
৩. অনিদ্রা দূর হবে পছন্দের গান বা সুর শুনলে অনিদ্রা দূর হবে। গান হলো সেই ওষুধ, যা কানের মধ্যে দিয়ে শরীরের অন্দরে প্রবেশ করে। তাইতো রাতে ঘুম আসতে না চাইলে ৩০-৪৫ মিনিট হালকা বিটের যে কোনো গান একটু শুনে নেবেন। এতে করে সারাদিনের দুশ্চিন্তা এবং চাপ হ্রাস পেয়ে দারুণ একটা ঘুম হবে।
৪. বাতের ব্যথাতে আরাম পাওয়া যায়বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা গেছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো কষ্টকর অসুখেও গানের বিশেষ ভূমিকা আছে। গান শুনলে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভুগছেন এমন রোগীদের ব্যথা উপশম করা সম্ভব হয়। তাই এখন মিউজিক থেরাপির দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। গান শুনলে শারীরিক ব্যথা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়ে রোগীকে আরাম দিতে পারে।
৫. ওজন কমাতে সাহায্য করেগান শুনলে ওজন কমে। জর্জিয়া টেক ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক প্রমাণ করেছেন গান শোনার সঙ্গে ওজন কমার সরাসরি যোগ রয়েছে। আসলে গান শোনার সময় মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে ওজন বাড়ার আশঙ্কা কমে। তাই এবার থেকে যখনই মনে হবে ওজন একটু বেড়েছে, তখনই হালকা আলোতে গান শুনতে শুনতে খাবার খাওয়া শুরু করবেন, দেখবেন উপকার মিলবে।
৬. স্মৃতিশক্তি বাড়াবেগান শোনার সঙ্গে স্মৃতিশক্তির নিবিড় যোগ রয়েছে। গান শুনলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অঞ্চল সক্রিয় হয়। স্নায়ুর চাপ কমে। স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। মনোযোগ ও একাগ্রতা বাড়ে। যে কোনো কাজেই উৎসাহ পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে কোনো কিছু শেখার ক্ষমতাও বাড়ে।
৭. একাকীত্বের সঙ্গীএকাকীত্বের সঙ্গী হতে পারে গান। একা কোনো সফরে থাকলে অথবা দীর্ঘ পথযাত্রায় মন ভলো রাখে গান। কোনো কারণে অবসাদ হলে অথবা অনেকের মাঝেও একা বোধ হলে গান শুনুন। নিমেষে মনের মেঘ কেটে যাবে।
৮. সৃজনশীলতা বাড়েলেখালেখি, ছবি আঁকা বা এই জাতীয় কোনো সৃজনশীল কাজ করার সময়ে প্রতিদিন কম করে এক ঘণ্টা গান শুনলে মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অংশ অ্যাকটিভ হয়। ফলে সৃজনশীলতা অনেক বেড়ে যায়।
সূত্র: হেলথ লাইন, হার্ভার্ড হেলথ, ভেরি ওয়েল মাইন্ড, জনস হপকিন্স মেডিসিন
আরও পড়ুন স্লো লিভিংয়ের দিকে মানুষ কেন ঝুঁকছে?যে ৬ অভ্যাস নীরবে আপনাকে সবার প্রিয় করে তুলবে
এসএকেওয়াই/কেএসকে/এএসএম