অভিবাসন নীতি কঠোর করা এবং পারিবারিক পুনর্মিলনে শর্ত যোগ করার বিধান রেখে আনা একটি বিলের সংশোধনী প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে পর্তুগালের পার্লামেন্ট।
মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে বামপন্থিদের তীব্র বিরোধিতার মুখে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডানপন্থিদের সমর্থনে বিলটি অনুমোদিত হয়।
অভিবাসন নীতিকে আরও কঠোর করে দেশটির অভিবাসন আইনে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল পর্তুগিজ সরকার। এর আগে পার্লামেন্টে তা অনুমোদনও পেয়েছিল। কিন্তু দেশটির প্রেসিডেন্ট ভেটো দেওয়ার কারণে পর্তুগালের সাংবিধানিক আদালত বিলটি পর্যালোচনা করে। পর্যালোচনার পর পারিবারিক পুনর্মিলন নিয়ে আপত্তি তোলার কারণে ওই বিলটি আটকে যায়।
ফলে, দেশটির ডানপন্থি সরকার তাতে আবার পরিবর্তন এনে সংশোধিত বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করে৷ নানা বিতর্ক আর আলোচনার পর মঙ্গলবার তাতে অনুমোদন দিয়েছে পার্লামেন্ট।
বামপন্থি সব দলের আইনপ্রণেতারা এই বিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু তাতে বিলটিকে আটকানো যায়নি। সাংবিধানিক আদালতের কারণে বিলটিতে আগের চেয়ে কিছুটা শিথিলতা আনা হয়েছে। কিন্তু তারপরও সন্তুষ্ট নন বামপন্থিরা।
তারা বলছেন, ইউরোপজুড়ে যে ডানপন্থি রাজনীতির প্রভাব দেখা যাচ্ছে, এই আইনটি তারই প্রতিফলন। কারণ, সরকারগুলো অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়ে উগ্র ডানপন্থার উত্থান ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
বামপন্থি আইনপ্রণেতা আন্দ্রেই গালভাও পার্লামেন্টে বলেন, এটি একটি নিষ্ঠুর আইন, যা একজন অভিবাসী বাবাকে তার সন্তান থেকে এবং একজন স্বামীকে তার স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে রাখে।
বিলের সংশোধনী প্রস্তাব করেছে ক্ষমতাসীন মধ্য-ডানপন্থি জোট। আর তাতে সমর্থন দিয়েছে চরম ডানপন্থি, অভিবাসনবিরোধী দল শেগা।
উগ্র ডানপন্থি দলটির নেতা আন্দ্রে ভেন্তুরা শুরুতে দাবি করেছিলেন, অভিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অন্তত পাঁচ বছর অবদান রাখতে হবে, তারপর তারা সামাজিক সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবেন। পরে অবশ্য এই শর্তটি প্রত্যাহার করেছেন তিনি।
কী আছে এই বিলে?পার্লামেন্টে অনুমোদিত বিলটি আইনি রূপ পেলে পারিবারিক পুনর্মিলনের শর্ত কঠোর হবে। একজন অভিবাসী আইনিভাবে পর্তুগালে দুই বছর বসবাস করার পরই পারিবারিক পুর্নমিলনের আবেদনের জন্য যোগ্য হবেন। তার আগে ওই অভিবাসী পারিবারিক পুনর্মিলনের কোনো সুযোগ পাবেন না।
তবে কিছু ব্যতিক্রম যোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে, পর্তুগালে আসার আগে এক বছরের বেশি সময় ধরে দাম্পত্য সম্পর্কে ছিলেন, এমন অভিবাসীদের জন্য এই সময়সীমা অর্ধেক করা হয়েছে।
এছাড়া, পর্তুগালে একজন অভিবাসীর বসবাসের সময়সীমা যা-ই হোক না কেন, তাদের ১৮ বছরের নিচের সন্তান বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নির্ভরশীলদের নিজের কাছে নিয়ে আসার আবেদন যে কোনো সময় করতে পারবেন।
প্রায় এক কোটি পাঁচ লাখ মানুষের ইবেরিয়ান দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী এসেছেন। পর্তুগিজ অভিবাসন ও আশ্রয় সংস্থা এআইএমএ-এর পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর পর্তুগালে ১৫ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিক বৈধভাবে বসবাস করছিলেন, যা তিন বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। অভিবাসীদের মধ্যে ব্রাজিলিয়ানরা শীর্ষে। সাড়ে চার লাখেরও বেশি ব্রাজিলিয়ান নাগরিক বৈধভাবে পর্তুগালে বসবাস করছেন।
আইনটি কার্যকর হলে ব্রাজিলের নাগরিকদের জন্য পর্যটন ভিসা নিয়ে পর্তুগাল এসে বৈধতা অর্জনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি নতুন আইনে চাকরি খোঁজার ভিসাও শুধু উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
আগে যে কোনো অভিবাসী পর্তুগালে এক বছরের বেশি সময় কাজ করলে এবং সামাজিক নিরাপত্তায় অবদান রাখলে রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়ার আবেদন করতে পারতেন। এমনকি পর্যটন ভিসা নিয়ে আসলেও সেই সুযোগটি দেওয়া হতো। কিন্তু গত বছর থেকে এই সুযোগটিও বন্ধ করে দিয়েছে পর্তুগাল।
দরজা খোলাও নয়, বন্ধও নয়সরকারের মুখপাত্র ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্য আন্তোনিও লেইতাও আমারো বলেছেন, সংশোধিত বিলটি অভিবাসন ইস্যুতে ‘সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখবে—অভিবাসীদের জন্য দরজা পুরোপুরি খোলাও নয়, আবার বন্ধও নয়।’
দেশটি তার শ্রমবাজারের চাহিদা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অভিবাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলে জানান তিনি।
পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের ভোটের আগে আন্তোনিও লেইতাও আমারো বলেন, ‘কিন্তু দায়িত্বজ্ঞানহীন অভিবাসন নীতির সময় শেষ।’
শিগগিরই কার্যকর হতে পারে আইনটিপার্লামেন্টের অনুমোদনের পর এই বিলটি আবারও প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দি সুজার কাছে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, তার হাতে আট দিন সময় রয়েছে। এর মধ্যে তিনি বিলটিতে সই করবেন, নয়তো আবারও পর্যালোচনার জন্য সাংবিধানিক আদালতে পাঠাবেন।
সাংবিধানিক আদালতের বিচারকদের অনুমোদিত সংস্করণটি কোনো পরিবর্তন ছাড়াই গ্রহণ করেছে সরকারি দল। তাই আশা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট দ্রুতই বিলটিতে সই করবেন। তার সইয়ের পরই তা আইনে রূপ নেবে এবং সরকারি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
এমআরএম/জিকেএস