জয়পুরহাটের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৮ মাস ধরে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া জনবল সংকট ও নানা অনিয়মে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দ্রুত ঔষধ সরবরাহসহ সব সমস্যা সমাধানের দাবি তাদের।
জানা যায়, জয়পুরহাট জেলায় ১১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ২৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার একমাত্র ভরসা এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্র। প্রতিদিন হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে। তবে বর্তমানে নানা সংকটে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ। এছাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসারসহ ৬ জন জনবলের বিপরীতে রয়েছেন ৩ জন। অন্যদিকে অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে খেয়ালখুশি মতো আসেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এতে সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অনেকেই বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন জেলা, উপজেলার হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে। অনেকেই টাকার অভাবে কিনতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাথান দাবি করেন।
‘আমাদের এখানে কমিউনিটি ক্লিনিকে কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। মানুষ এসে এসে ঘুরে যায়। দায়িত্বরত ডাক্তার অফিস খোলেন ১০টায় আর বন্ধ করেন ১টার মধ্যে। কোনোদিন একটু দেরিতে যায়, আবার কোনোদিন আসেনই না।’
আরও পড়ুন:‘ডাক্তারও নাই ওষুধও নাই, হামরা কি বিনা চিকিৎসায় মরি যামো?’একমাত্র জনবল একজন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান সপ্তাহে একদিন
সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের পুরাতন বাজারের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের এখানে কমিউনিটি ক্লিনিকে কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। মানুষ এসে এসে ঘুরে যায়। দায়িত্বরত ডাক্তার অফিস খোলেন ১০টায় আর বন্ধ করেন ১টার মধ্যে। কোনোদিন একটু দেরিতে যায়, আবার কোনোদিন আসেনই না।’
সোটাহার গ্রামের রফিকুল ইসলাম হোসেন বলেন, ‘প্রায়ই ওষুধ নেওয়ার জন্য আসি ক্লিনিকে। কিন্তু ওষুধ পাই না। ৭-৮ মাস ধরে দেখছি এমন অবস্থা। এখানে যদি ওষুধ নাই পাওয়া যায়, তাহলে এই ক্লিনিক রেখে লাভ কী?’
কোমরগ্রামের আনিসুর রহমান বলেন, ‘ওষুধ নেওয়ার জন্য কয়েকদিন থেকে ঘুরছি, কিন্তু পাচ্ছি না। শুনছি আসবে, কিন্তু কবে আসবে তা জানি না। শহরে গেলে ১০০-২০০ টাকা খরচ হয়। এখানে যদি ওষুধ থাকতো তাহলে শহরে যেতে হতো না। এজন্য জরুরি ওষুধ সরবরাহ করা হোক।’
‘ডিসেম্বরের পর থেকে ওষুধ না থাকায় রোগী অনেক কমে গেছে। প্রতিমাসে ১৫০০ রোগী হতো। এখন শুধু ২০০-২৫০ জন রোগীর কাউন্সেলিং করি। ওষুধ পাচ্ছেন না দেখে রোগীদের মন খারাপ। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এরকম থাকলে সেবার মান অনেক কমে যাবে। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো দ্রুত ওষুধ সরবরাহের জন্য।’
ক্ষেতলাল উপজেলার দাশড়া গ্রামের মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিক প্রায় সময় বন্ধ থাকে। কোনো ওষুধ পাওয়া যায় না। কবে যে ওষুধ আসবে তা কেউ বলতে পারছে না। আমাদের গরিব মানুষদের জন্য সমস্যা হয়ে গেছে।’
বম্বু ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসের পর থেকে আমরা ওষুধ সরবরাহ পাচ্ছি না। এজন্য সাধারণ মানুষকে দিতে পারছি না। তারপরও যেসব রোগীরা আসছেন তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে ব্যবস্থাপত্র বা সেবা দিচ্ছি। তবে শুনেছি যে, দুই এক মাসের মধ্যে ওষুধ আসবে।’
ক্ষেতলালের বড়তাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা বেদেনা খাতুন বলেন, ‘ডিসেম্বরের পর থেকে ওষুধ না থাকায় রোগী অনেক কমে গেছে। প্রতিমাসে ১৫০০ রোগী হতো। এখন শুধু ২০০-২৫০ জন রোগীর কাউন্সেলিং করি। ওষুধ পাচ্ছেন না দেখে রোগীদের মন খারাপ। অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এরকম থাকলে সেবার মান অনেক কমে যাবে। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো দ্রুত ওষুধ সরবরাহের জন্য।’
‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো শুক্রবার বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। কেউ যদি সময়মতো না খোলেন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিসেম্বরের পর থেকে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। চাহিদা দিয়েছি, ওষুধ সরবরাহ প্রাপ্তি স্বাপেক্ষে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’
আরও পড়ুন:বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে এসে হয়রানির সাগরে পড়েন রোগীরা‘আপা’ বলায় ক্ষেপে রোগীকে বের করে দিলেন চিকিৎসক
জামালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা চন্দনা রানী বলেন, ‘৭ মাস থেকে কোনো ওষুধ পাইনি। এজন্য রোগীরা আসে আবার ঘুরে যায়। আমরা যদি ওষুধ না পাই তাহলে রোগীদের কীভাবে দেবো?’
এ বিষয়ে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘ডিসেম্বরের মাসের পর থেকে ওষুধ সরবরাহ নেই। এজন্য কিছু বিঘ্ন হচ্ছে। তবে পরিবার পরিকল্পনাসহ অন্যান্য সেবা আমরা দিচ্ছি। আশা করছি দ্রুত ওষুধের সরবরাহ পাবো। তাহলে এসব সমস্যা কেটে যাবে।’
জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. আল মামুন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো শুক্রবার বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখতে হবে। কেউ যদি সময়মতো না খোলেন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিসেম্বরের পর থেকে ওষুধ সরবরাহ না থাকায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদা দিয়েছি, ওষুধ সরবরাহ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’
এমএন/এএসএম