ছয় দফা দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত ও ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আগামী রোববার (৫ অক্টোবর) থেকে তাদের কর্মসূচি শুরু হবে।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল, ওএসডি প্রত্যাহার, শর্ত আরোপ করে অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট নেওয়া বন্ধ এবং পানিশমেন্ট ট্রান্সফার বন্ধসহ ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়। এছাড়া চাকরিচ্যুত এবং ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা তাদের নানা দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।
কর্মকর্তারা জানান, চাকরিচ্যুতি ও ওএসডি প্রত্যাহার, অতীতের হামলার বিচার এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই কাজে যোগ দেবেন না তারা। আগামী রোববার থেকে অফিসে না গিয়ে কর্মবিরতি পালন করবেন।
চাকরিচ্যুত ও ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মো. হুমায়ুন সিকদার, এমদাদ হোসাইন, মো. মোক্তার রসিদ।
তারা বলেন, ‘আপনারা এরই মধ্যে অবগত আছেন- ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত চট্টগ্রামের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা বর্তমানে এক অভূতপূর্ব মানবিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রায় ৪০০ জন কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তাকে ওএসডি করে কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রাখা হয়েছে। এর আগে আমাদের ওপর হামলা ও মারধর করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এসব অন্যায় ও নিপীড়নের পরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছি।’
বক্তারা বলেন, ‘এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আমরা বিনা কারণে টার্মিনেট করা কর্মকর্তাদের স্বপদে পুনর্বহাল, প্রহসনমূলক পরীক্ষা বয়কটের জন্য আমাদের কর্মকর্তাদের যে পানিশমেন্ট ট্রান্সফার দেওয়া হচ্ছে তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, গত সরকারের আমলে দেওয়া অবৈধ প্রমোশনের তদন্ত, বৈষম্যহীন ও রাজনীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি, শর্ত আরোপ করে সব ধরনের অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট বন্ধ এবং চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের ওপর চালানো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি, এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের সব কর্মকর্তাকে পুনরায় কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমাদের সেই দাবিগুলোর বিষয়ে ইসলামি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
বাধ্য হয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যেতে হচ্ছে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবির বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে সময় দিয়েছি। কিন্তু এখনো ন্যায়বিচার পাইনি। এ জন্য আমরা রোববার (৫ অক্টোবর) থেকে আর কর্মস্থলে যাবো না এবং সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবো। যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে না, ততদিন পর্যন্ত এ কর্মসূচি বলবৎ থাকবে।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তারা বলেন, ‘আমাদের এ দাবির কোনোটিই অতিরঞ্জিত নয়। এটা মানুষের মৌলিক অধিকার, পরিবারের অন্ন-ব্যবস্থা, সম্মানের প্রশ্ন। আমরা যদি আজ একত্রিত না হই, আগামীকাল আমাদের সন্তানরা একই মর্মান্তিক অনিশ্চয়তায় কাঁদবে। তাই আমাদের হাহাকার দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিন। কেননা এটি শুধু আমাদের প্রতিবাদ নয়, এটি দেশের প্রতিটি কর্মজীবী মানুষের ন্যায়বিচারের আর্তনাদ।’
এমআরএএইচ/এমএএইচ/এএসএম