জাতীয়

যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী শাহজালালে ট্রলি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলোর প্রধান অপারেশনাল কেন্দ্র। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে দিনে প্রায় ১৯০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ২২ হাজার যাত্রী আগমনী ও বহির্গমন টার্মিনাল ব্যবহার করেন।

যাত্রীদের লাগেজ বহনে দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরটিতে ট্রলি সংকট চলছে। সম্প্রতি এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। প্রায় সময়ই শাহজালাল বিমানবন্দরে ট্রলি নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে টানাটানি, তর্ক-বিতর্কের ঘটনা ঘটছে। এ সমস্যা বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মুসা আহমেদ।

জাগো নিউজ: শাহজালাল বিমানবন্দরে বেশ কয়েক বছর ধরে ট্রলি সংকটের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি এ সংকট প্রকট হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এ সংকট নিরসনে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কী উদ্যোগ নিয়েছে?

এস এম রাগীব সামাদ: এখন শাহজালাল বিমানবন্দরে আগমনী ও বহির্গমনে তিন হাজার ৬শ ট্রলি আছে। এত সংখ্যক ট্রলি থাকার পরও প্রতিদিন মধ্যরাতে একসঙ্গে একাধিক ফ্লাইট অবতরণ করলে ট্রলি সংকট দেখা দেয়। বিশেষ করে একসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব থেকে আসা দুটি ওয়াইড বডি উড়োজাহাজ অবতরণ করলেই এ সংকট প্রকট হয়। কারণ, প্রতিটি উড়োজাহাজে চারশর বেশি যাত্রী থাকে। আবার একই সময়ে অন্য দেশের ফ্লাইটও ওঠা-নামা করে। আমাদের যাত্রীদের ধৈর্যের সঙ্গে তা মোকাবিলা করতে হবে।

আরও পড়ুনশাহজালাল বিমানবন্দরে ট্রলি নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলা বিমানের নথি আটকে রাখা আইন কর্মকর্তা নিজেই আইনের জালে শাহজালাল বিমানবন্দরে তবু সেই ‘মাছ বাজারের ভিড়’ 

জাগো নিউজ: এ সংকটের আর কী কী কারণ আছে বলে মনে করেন?

এস এম রাগীব সামাদ: আমাদের যাত্রীদের অধিকাংশই লাগেজ (চাকা থাকে এমন লাগেজ) ব্যবহার করেন না। তারা বক্স বা কার্টন, প্যাকেট, পোটলায় করে মালামাল দেশে আনেন। আবার আমাদের বহির্গমনে যারা যান, তারা ব্যাগেজ বুকিং দিয়েই ট্রলির কাজ শেষ। কিন্তু আগমনী যাত্রীদের ক্ষেত্রে তারা লাগেজ বেল্ট থেকে ক্যানোপি গিয়ে গাড়ি না পাওয়া পর্যন্ত ট্রলি আটকে রাখেন। অনেক যাত্রী আবার ট্রলি পার্কিং এবং রাস্তায় নিয়ে যান। যারা ট্রলি লাগেজ নিয়ে আসেন, তারা আবার ট্রলি ছেড়ে দেন। এক্ষেত্রে আগমনী যাত্রীদের ট্রলি পেতে সময় লাগে।

ক্যানোপি গিয়ে গাড়ি না পাওয়া পর্যন্ত ট্রলি আটকে রাখেন। অনেক যাত্রী আবার ট্রলি পার্কিং এবং রাস্তায় নিয়ে যান। যারা ট্রলি লাগেজ নিয়ে আসেন, তারা আবার ট্রলি ছেড়ে দেন। এক্ষেত্রে আগমনী যাত্রীদের ট্রলি পেতে সময় লাগে

জাগো নিউজ: বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা কোথায়?

এস এম রাগীব সামাদ: বিদ্যমান টার্মিনাল (টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২) দুটিতে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এখানে যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী ট্রলি রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এর মধ্যে যখন একসঙ্গে দুই-তিনটি ফ্লাইট নেমে যায়, তখন চাহিদা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় আরও ট্রলি যদি আনা হয়, তাহলে সেসব ট্রলি রাখার মতো জায়গা টার্মিনালে নেই।

গত অর্থবছর ধারণক্ষমতার দেড় গুণ বেশি যাত্রী শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। এবার হয়তো আরও বেশি হবে। বিমানবন্দরে ফ্লাইট আসছে, যাচ্ছে সবার সুযোগ-সুবিধার জন্যই কিন্তু কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। তার মধ্যে ট্রলির চাহিদাও বাড়ছে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় চার-পাঁচটি ফ্লাইট একসঙ্গে অবতরণ করলে বিমানবন্দরে চাপ সৃষ্টি হয়। শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে

একটি ফ্লাইট অবতরণের পর যাত্রীরা দ্রুত ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেন। তারপর সবার একটু তাড়াহুড়া থাকে কখন বাড়ি যাবেন। এজন্য তারা আগে লাগেজ বহনে ট্রলি খোঁজেন। যে কারণে ট্রলির সংকট হয়। অর্থাৎ, এখন বিমানবন্দরে যত সংখ্যক ফ্লাইট অবতরণ করছে, সে অনুপাতে ট্রলি কম।

জাগো নিউজ: এসব সমস্যা থেকে সমাধান নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?

এস এম রাগীব সামাদ: ট্রলি সংকট হঠাৎ করে হয়নি। যখন হজের ফ্লাইট চলছে, তখন কিন্তু শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে আরও বেশি যাত্রী আসা-যাওয়া করছে। তখন আমরা ফ্লাইট আগমনের আগেই জায়গা মতো ট্রলি সাজিয়ে রেখেছি। তখন ভালোভাবেই আমরা তা সামাল দিয়েছি। এখন আমরা তা-ই করছি। তবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় চার-পাঁচটি ফ্লাইট একসঙ্গে অবতরণ করলে বিমানবন্দরে চাপ সৃষ্টি হয়। শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।

বিদ্যমান টার্মিনাল দুটিতে আমাদের নতুন কিছু ট্রলি লাগবে। বেবিচক থেকে আমাকে ট্রলির স্টোরেজের বিষয়ে জানতে চেয়েছে। আমি বলেছি, কোনো একটি স্টোরেজ তো আমাকে ব্যবস্থা করতে হবে। আবার অতিরিক্ত ট্রলি রাখলে যাত্রীদেরও সমস্যা হবে। তারপরও আমাদের চেষ্টা আছে ৫শ ট্রলি বাড়ানোর। আশাকরি শিগগির তা ব্যবস্থা করতে পারবো।

জাগো নিউজ: জাগো নিউজকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এস এম রাগীব সামাদ: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

এমএমএ/এএসএ/এমএফএ/জিকেএস