জাতীয়

ভারতে হাসিনার অবস্থান আইনি বিষয়, সমাধানে প্রয়োজন দুদেশের পরামর্শ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং তাতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছেন, বিষয়টি একটি ‘বিচারিক ও আইনি প্রক্রিয়া’, যা দুই দেশের সরকারের মধ্যে ‘সংলাপ ও পরামর্শ’ সাপেক্ষ।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো পর্যালোচনা করছি। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এসব বিষয়ে একযোগে কাজ করতে আমরা আগ্রহী। এ মুহূর্তে এর বাইরে কিছু বলা গঠনমূলক হবে বলে আমি মনে করি না।’

ভারত সফররত বাংলাদেশের কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাব সদস্যদের সঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল, যুগ্ম সচিব (বাংলাদেশ ও মিয়ানমার) বি. শ্যাম, ডিক্যাব সভাপতি একেএম মঈনুদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন উপস্থিত ছিলেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমাদের নিয়ে এ ধারণা দূর করা উচিত যে আমরা কোনো নির্দিষ্ট পক্ষের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বা এক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি এবং অন্য পক্ষকে উপেক্ষা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেট প্রকাশ পাক এবং একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার গঠিত হোক।’

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে পুনর্বহালের চেষ্টা করা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নে বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘আমরা শুধু চাই বাংলাদেশের জনগণ যেন গণতান্ত্রিকভাবে তাদের ম্যান্ডেট প্রকাশের সুযোগ পায়।’

‘আমরা চাই বাংলাদেশে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। যে সরকার জনগণের ম্যান্ডেটে নির্বাচিত হবে, ভারত সেই সরকারের সঙ্গেই কাজ করবে। এর বাইরে বলার মতো কিছু নেই’- যোগ করেন তিনি।

সম্প্রতি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে ভারতকে পাঠানো অনুরোধের বিষয়ে এখনো কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করার অনুরোধ জানিয়েছে, কিন্তু ভারতের কাছ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ভারতের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি। বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে; কেউ আসুক বা না আসুক, বিচার থেমে থাকবে না।’

এর আগে খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর করা মন্তব্যকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করে নয়াদিল্লি।

বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চেয়ে গত ডিসেম্বরে ভারতে কূটনৈতিক নোট (নোট ভারবেল) পাঠায়, সঙ্গে পাঠানো হয় কিছু সহায়ক নথিও।

মতবিনিময় সভায় বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে গঠিত গণতান্ত্রিক সরকারের সঙ্গে ভারত কাজ করতে প্রস্তুত।’

ঘণ্টাব্যাপী ওই মতবিনিময় সভায় তিনি সীমান্ত, পানিবণ্টনসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যু এবং বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনাকে ঘিরে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো সম্পর্কেই কিছু স্বাভাবিক জটিলতা থাকে।’

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ডিক্যাবের ২৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে নয়াদিল্লি সফর করছে।

জেপিআই/এমকেআর/এএসএম