বস্তিবাসীর পুনর্বাসন না করে, মানুষ যেন বস্তির বাসিন্দা না হয় সেভাবে পরিকল্পনা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে সোমবার (৬ অক্টোবর) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় রিজওয়ানা এ তাগিদ দেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এ সভা হয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বস্তি কিন্তু কোনো বসতি না। নিতান্ত বাধ্য না হলে কেউ বস্তিতে থাকতে চান না। বস্তিবাসীর পুনর্বাসন না করে, মানুষ যেন বস্তির শরণাপন্ন না হয় সেভাবে পরিকল্পনা হতে হবে। বস্তিতে যেন থাকতে না হয় সে জন্য নদীভাঙনকবলিত লোকজনের জন্য সংশ্লিষ্ট জায়গাতেই বসতি নির্মাণ সম্ভব।
মধ্য ও নিম্নবিত্তের আবাসনের জন্য বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসায় আহ্বান জানিয়ে রিজওয়ানা বলেন, ‘বিকেন্দ্রীকরণ, অংশীদারত্ব, সবুজায়ন ও দুর্যোগ সহনশীলতার মাধ্যমে আমরা নিরাপদ বসতি গড়তে পারি।’
বড় শহরের আবাসন প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, ঢাকায় একজন লোক কতটি প্লট কিনতে পারেন- এমন প্রশ্ন করলে বলা হয় মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এর সীমা নেই। বসতি একজন মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু ঢাকাকেন্দ্রিক বা বড় বড় শহরে প্লট দেওয়া বন্ধ করে বরং ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক হওয়া উচিত।
রিজওয়ানা বলেন, ‘বসতির ধারণা পালটে গেছে। কম ভূমির দেশে সবার জন্য নিরাপদ বসতি কীভাবে নিশ্চিত করবো সেটা ভাবা উচিত। বসতি মানে শুধু ফ্ল্যাট নয়। অনেককে সরকারিভাবে ঘর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেকেই সেখানে থাকছে না। কারণ, সেখানে জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়নি। আমাদের একটা মডেল তৈরি করা দরকার। ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দুর্যোগ সহনশীল বসতির কথা ভাবতে হবে।’
অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘পরিকল্পিত নগরায়ন কেবল কাঠামোগত উন্নয়ন নয়। আমাদের সামগ্রিক উন্নয়ন করতে গেলে সবার জন্য বাসযোগ্য নগর গড়তে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ন দেশের মানুষের জীবনমানের অবনতি ঘটাচ্ছে। নগর পরিকল্পনা করতে গেলে পরিকল্পিত বাসযোগ্য নগর গড়ে তোলা, ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার, অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী-খাল রক্ষা করা এসব বিষয়ের ওপর জোর দিতে হবে।’
আারও পড়ুনঢাকাকে বাসযোগ্য করতে সেপটিক ট্যাংক ও এসটিপি স্থাপন করতে হবেসেন্টমার্টিনে পর্যটন কখনোই বন্ধ করা হয়নি: পরিবেশ উপদেষ্টা১ জানুয়ারি থেকে সচিবালয় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকমুক্ত হবে
বসতি নির্মাণে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি দরিদ্র, মধ্যবিত্তদের। তারা যেন সঠিক সেবা পায়। দুর্নীতিকে পেছনে ফেলে আমরা যেন তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’
এ সময় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করতে নতুন কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে ঢাকার চেহারা বদলে যাবে। তবে তিনি বলেন, ‘আমরা পাঁচ বছরের পরিকল্পনা করি কিন্তু তা বাস্তবায়ন করি ৫০ বছর ধরে। এ চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
উত্তরায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তের জন্য আবাসনের ব্যবস্থার কথা জানিয়ে রিয়াজুল বলেন, ‘অনেকে বলেন রাজউক কেবল বড়লোকদের জন্য, এ তকমা থেকে সরে আসতে চাই।’
বসতি নির্মাণ করতে গিয়ে পরিবেশকে কম গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে সভায় অভিযোগ করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মোহাম্মদ খান। তিনি বলেন, আবাসনের নামে জলাশয়গুলো ভরাট করা হচ্ছে। জলাশয় ভরাট করে আবাসন যেন করা না হয় সে দিকে নজর দেওয়া দরকার। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
সভায় রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ন দরকার। এ জন্য ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
এসএম/একিউএফ/এমএস