দেশজুড়ে

খেলার মাঠে হোটেল-রেস্তোরাঁ

একসময় যে সরকারি মাঠে চলত ক্রিকেট আর ফুটবলের জমজমাট টুর্নামেন্ট। আজ সেই দৃষ্টিনন্দন খেলার মাঠটি দখলদারদের কব্জায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের বারোঘরিয়ার সেই মাঠটিতে অবৈধভাবে একের পর এক গড়ে উঠেছে হোটেল, রেস্তোরাঁ ও দোকানপাট। এই দখলের ফলে শুধু খেলাধুলা বন্ধ হয়নি, মাঠটি পরিণত হয়েছে মাদক ও জুয়ার নিরাপদ আস্তানায়। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের চাঁদাবাজির কারণে বারবার উচ্ছেদ অভিযানও ব্যর্থ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সজল আহমেদ জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন তরুণ-যুবকরা এই মাঠ দখল করে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে ‘খেলা হবে, খেলা হবে’ স্লোগান দিয়ে উল্লাস করেছিল। কিন্তু তাদের এই আনন্দ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। সরকার পতনের কয়েক মাসের মধ্যেই মহানন্দা নদীর ধারের সরকারি পার্ক ও খেলার মাঠ আবারও অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে।

আরেক বাসিন্দা আলি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যুগ যুগ ধরে এই মাঠে ক্রিকেট ও ফুটবলের টুর্নামেন্ট হতো। কিন্তু গত তিন বছর ধরে মাঠ দখল করে শতাধিক দোকানপাট ও হোটেল নিয়ে বাজার তৈরি করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর মাইক আর আলোর ঝলকানিতে এই বাজার আরও জমজমাট হয়। খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়ে এলাকার তরুণ-যুবকরা মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

অভিযোগ রয়েছে, খেলার মাঠে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বাজার থেকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল নিয়মিত চাঁদাবাজি করে। প্রত্যেক দোকান থেকে দৈনিক ৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। এসব দোকান ও হোটেল স্থাপনের সময় নেওয়া হয়েছে ৪-১০ হাজার টাকা। বাজারে সন্ধ্যা হলেই বসে জুয়া ও মাদকের আসর। দফায় দফায় প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করলেও আবারও বসে বাজার।

তবে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি দখলদার ও চাঁদা আদায়কারী কেউই।

বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর রশীদ বলেন, খেলার মাঠ দখল করে বাজার তৈরি হওয়ায় সেখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, অবনতি হয়েছে পরিবেশ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী, তাই আমাদের কথা শুনছেন না।

বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, তাদের একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এবার দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

এর আগে গতবছরের ২৩ জুলাই রাতে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে সরকারি পার্ক ও খেলার মাঠ থেকে স্থায়ী, অস্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ মিলে শতাধিক দোকান উচ্ছেদ করে প্রশাসন।

সোহান মাহমুদ/কেএইচকে/এমএস