কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের প্রায় সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। দুধকুমার নদের পানি গত তিনদিনে বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
নদীভাঙনে সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকায় গত দুদিনে অন্তত ৪০টি বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দুই শতাধিক বসতভিটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মনছেনা বেগম (৩৮)। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জায়গা-জমি সউগ (সব) নদীর পেটোত গেলো। নদী ভাঙতে ভাঙতে এমন অবস্থা করছে, একটু আশ্রয় নেমো তার উপায় নাই। দুইদিন বৃষ্টি আর উজানের ঢলের স্রোতে ধপাধপ করি কাছার ভাঙি বসতবাড়ি-গাছপালা সউগ গিলি খাইলো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুধকুমার নদের তীরবর্তী চর যাত্রাপুর, বানিয়াপাড়া এলাকায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসবাস। কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে দুধকুমার নদের পানি বেড়ে বানিয়াপাড়ায় ভাঙন দেখা দেয়। সোম ও মঙ্গলবারের ভাঙনে সেখানকার প্রায় ৪০টি বসতবাড়ি বিলীন হয়েছে।
বানিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এরশাদুল হক বলেন, ‘এক বিঘা মাটিতে বসতভিটা আছিল। এখানে হলুদ ও আদা লাগিয়ে কোনোরকম ছয় সদস্যের পরিবার চালাতাম। দুধকুমারের ভাঙনে আজ ভিটেমাটি সউগ শেষ হয়া গেলো। বড় বড় আম, কাঁঠালের গাছ চোখের সামনে নদী ভাঙি নিলো। আদা-হলুদ উঠানোর সময় পাইনি। কোনোরকম ঘরবাড়ি রক্ষা করতে পেরেছি।’
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর বলেন, ‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আমার চোখের সামনে ১৭টি বাড়ি ভেঙে গেলো। তাকায় তাকায় দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না। অথচ পাশেই বালুভর্তি জিওব্যাগ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, এই জিওব্যাগ আলাদা প্যাকেজের। এখানের জন্য কোনো বরাদ্দ ধরা হয়নি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উজানের ঢল ও তিস্তার প্রবল স্রোতে রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁন ইউনিয়নের হাঁসার পাড় এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েকবছর আগে ওই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিওব্যাগ ফেলেছিল। কিন্তু উজানের স্রোতে কিছু ভেসে গেছে, অনেক বস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ওই এলাকার কয়েকশ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
ধরলা নদীর ভাঙনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুই শতাধিক পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ওই ইউনিয়নের একমাত্র খুদিরকুটি আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই স্কুল ভেঙে গেলে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ছেলেমেয়েরা সবাই মুর্খ হয়ে থাকবে। আমরা কোনো ত্রাণ চাই না ভাই, ধরলার ভাঙন থেকে স্কুল বাঁচান।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘উজানের ঢলে জেলার ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ কয়েকটি নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা জরুরি ভিত্তিতে সেসব এলাকার জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন মোকাবিলার চেষ্টা করছি। যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার ভাঙন মোকাবিলার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, ‘উজানের ঢলে হঠাৎ নদ-নদীর পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙন মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।’
রোকনুজ্জামান মানু/এসআর/এমএস