জাতীয়

শ্রমিকদের বেতন-মজুরি দেওয়া মালিকদের দায়িত্ব, সরকারের নয়

শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, শ্রমিকদের বেতন-মজুরি দেওয়া মালিকদের দায়িত্ব, সরকারের নয়। প্রয়োজনে মালিকদের নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। যারা তা করবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাসপোর্ট বাতিল থেকে শুরু করে মানি লন্ডারিং মামলাও করা হবে।

বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শ্রম সংস্কারে কার্যকর সামাজিক সংলাপের ওপর বুধবার (৮ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের ত্রিপক্ষীয় সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন। যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত এক বছরে আমরা লক্ষ্য করেছি যে গঠনমূলক, ইতিবাচক ও সক্রিয় ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শ্রম খাতে যে কোনো বিরোধের সমাধান সম্ভব হয়েছে। আমরা শ্রম অসন্তোষ নিরসনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে একাধিকবার শ্রমিক, মালিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে সামাজিক সংলাপ আয়োজন করেছি। শ্রমিক ও মালিক প্রতিনিধিদের প্রস্তাব এবং শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা করে আইন সংশোধন করা হচ্ছে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে পরামর্শের পর মন্ত্রিসভা (উপদেষ্টা পরিষদ সভা) আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সনদ অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলো হলো- কনভেনশন ১৫৫ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য), কনভেনশন ১৮৭ (প্রচারমূলক কাঠামো) এবং কনভেনশন ১৯০ (সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ)।

আরও পড়ুনবিভিন্ন দেশের ভিসা জটিল হয়ে গেছে, আমাদের ঘর গোছাতে হবে সবাই নির্বাচন মুডে এলে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল কমে যাবে 

তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন, যা নিশ্চিত করবে যে শ্রম খাতের সব সামাজিক অংশীদার আন্তর্জাতিক শ্রমমান যথাযথ অনুসরণ করবে।

শ্রমিকদের কল্যাণে মালিকদের দায়িত্বের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, শ্রমিকদের বেতন-মজুরি প্রদান মালিকদের দায়িত্ব, সরকারের নয়। প্রয়োজনে মালিকদের নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। যারা তা করবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে- পাসপোর্ট বাতিল থেকে শুরু করে মানি লন্ডারিং মামলাও করা হবে।

অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া বলেন, এই ত্রিপক্ষীয় সম্মেলন আমাদের যৌথ বিশ্বাসের প্রতিফলন। সরকার, নিয়োগকর্তা কিংবা শ্রমিক- কোনো একক পক্ষ একা টেকসই সংস্কার অর্জন করতে পারে না। সহযোগিতা, আস্থা ও সামাজিক সংলাপই আমাদের পথনির্দেশক।

বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর ম্যাক্স তুয়িনোন বলেন, শক্তিশালী সামাজিক সংলাপের প্রক্রিয়া ও চর্চা ত্রিপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় উভয় ক্ষেত্রেই মর্যাদাপূর্ণ কাজ এবং টেকসই উদ্যোগ এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম হাতিয়ার। সামাজিক সংলাপ শুধু একটি উপকরণ নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, যা টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, কার্যকর আইন কাঠামো ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিশ্রুতি।

সম্মেলনে সামাজিক সংলাপের মাধ্যমে টেকসই শ্রম সংস্কার, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রম আইন সংশোধন এবং ডিসেন্ট ওয়ার্ক বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। উচ্চপর্যায়ের এ সম্মেলনে সহযোগিতা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের টিম ইউরোপ ইনিশিয়েটিভ, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং কানাডা।

এমএএস/কেএসআর/জিকেএস