বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) জনস্বাস্থ্যের এক বৈশ্বিক সাফল্য হিসেবে স্বীকৃত হলেও জনবল ঘাটতি, বাজেট বিলম্ব ও নগর এলাকায় দুর্বল বাস্তবায়ন এখন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ‘বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের সাফল্য, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক প্রেস কনফারেন্সে এ তথ্য জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন। এটি ইউনিসেফ বাংলাদেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের যৌথ অ্যাডভোকেসি প্রোজেক্টের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)-এর সহায়তায়।
প্রেস কনফারেন্সে জানানো হয়, টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুহার ৮১.৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত দুই দশকে ৫ কোটিরও বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যা প্রতি বছর প্রায় ৯৪ হাজার শিশুর জীবন বাঁচাতে সহায়তা করছে। টিকায় বিনিয়োগকৃত প্রতি ১ ডলারে ২৫.৪ ডলার রিটার্ন পাওয়া যায় — যা প্রমাণ করে টিকা স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের অন্যতম সেরা বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে পোলিও, মাতৃ ও নবজাতক ধনুষ্টংকার নির্মূলে সফলতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি হেপাটাইটিস নিয়ন্ত্রণ ও কিশোরীদের মধ্যে ৯৩ শতাংশ এইচপিভি টিকা কভারেজ অর্জন একটি বড় অর্জন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
প্রেস কনফারেন্সে বলা হয়, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৫ কোটি শিশুকে টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) দেওয়া হবে।
তবে টিকাদান কর্মসূচিতে এখনো বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। দেশের টিকাদান প্রকল্পে বরাদ্দকৃত জনবলের প্রায় ৪০ শতাংশ পদ শূন্য, যার মধ্যে স্বাস্থ্য সহকারী, পরিদর্শক, ইপিআই টেকনিশিয়ানসহ সদর দপ্তরের ৪৩ শতাংশ পদও পূরণ হয়নি। জেলা পর্যায়ে কোল্ড চেইন টেকনিশিয়ানের পদে শূন্যতার হার ৫৩ শতাংশ।
বাজেট অনুমোদনে বিলম্ব ও ৫ম এইচপিএনএসপি অনুমোদন না হওয়ায় টিকা ক্রয়, পরিবহন ও বিতরণে সমস্যা হচ্ছে। এতে কিছু জেলায় টিকার ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের হেলথ ম্যানেজার ডা. রিয়াদ মাহমুদ।
তারা বলেন, নগর এলাকায় টিকাদান কৌশল দুর্বল হওয়ায় অনেক শিশু এখনো টিকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সভায় আরও জানানো হয়, টিকাদান কার্যক্রমের নির্বিঘ্ন বাস্তবায়নে সরকার ১,৪০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে। এরই মধ্যে ২৪ জেলায় নতুন টিকাদান কর্মী নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে এবং ইউনিসেফের সহায়তায় আগামী নভেম্বরের মধ্যে টিকার ঘাটতি সমস্যা সমাধান হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম।
টিটি/এমআইএইচএস/এএসএম