সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মো. মেজবাউল ইসলাম বলেছেন, বিভিন্ন দুর্যোগের সময় সাইকোলজিক্যাল সার্ভিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সংকটকালীন বা দুর্যোগের সময় এই কাউন্সেলিং সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় জাগো নিউজ কার্যালয়ে বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে আয়োজিত ‘বিপর্যয়-জরুরি অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবা’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
মেজবাউল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনা বা ট্রমার সময় একজন মানুষ কথা বলতে পারে না, নিজেকে অসহায় মনে করে, তার ভেতরে আতঙ্ক তৈরি হয়, সে ভাবে আমার জীবন শেষ। তখন একজন কাউন্সেলর বা সাপোর্টিভ মানুষ তাকে আশ্বস্ত করলে, সে অনেকটা স্বস্তি পায়।
তিনি বলেন, দুর্যোগের সময় কাউন্সেলরের মাধ্যমে রোগীরা আশ্বস্ত হয়। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এই সংকটকালীন রোগীর শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ যেমন, পেলপিটেশন, মন খারাপ, ক্ষুধামন্দা, অস্থিরতা, অশান্তি অনেকটাই কমে আসে। এজন্য তাকে সঠিক ধারণা দিতে হয়। আপনি এখন যে সংকটে আছেন, এই চিন্তাগুলো স্বাভাবিক, কিন্তু এটা স্থায়ী নয়। আপনার সঙ্গে আমরা আছি, আপনি একা নন। এই সমস্যাটি সাময়িক, সময়ের সঙ্গে এটি কমে যাবে।
মেজবাউল ইসলাম আরও বলেন, এই পর্যায়ে ‘অ্যাকটিভ লিসেনিং’ বা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনা অত্যন্ত জরুরি। তার চিন্তা, আবেগ বোঝা, ভুল বা বাড়াবাড়ি অংশ থাকলে সেটি ফিডব্যাকের মাধ্যমে সংশোধন করা, এবং তাকে ভেন্টিলেশন বা আবেগ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া। এসবের মাধ্যমে সে হালকাবোধ করে।
আরও পড়ুন:পড়ালেখার ধরন বদলে যাওয়ায় মানসিক চাপে শিশু শিক্ষার্থীরাদুর্যোগ পরিস্থিতিতে প্রতি পাঁচজনে একজন মানসিক রোগে আক্রান্ত হনমানসিক রোগীদের ৯২ শতাংশই চিকিৎসার বাইরে, প্রধান অন্তরায় লজ্জা
সংকটে দুর্যোগ পরবর্তী সময় রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে পরিণত হতে পারে। যেমন আগুন বা ধোঁয়া দেখলে আতঙ্ক তৈরি হওয়া। এ ক্ষেত্রে রোগীকে তার অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি প্রকাশে উৎসাহিত করতে হয়, তাকে বোঝাতে হয় যে শারীরিক উপসর্গগুলো- যেমন, ঘাম, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া তার চিন্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
সাইকোথেরাপি সেশনে এর প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাইকোথেরাপির সময় আমরা যেটা করি তাকে ফর্মুলেশন বলা হয়। কারণ সবার সমস্যা একই নয়, পারসন টু পারসন ভিন্ন হয়। রোগীর পার্সোনালিটি, পারিবারিক অবস্থা, সামাজিক প্রেক্ষাপট, সব বিবেচনায় রাখতে হয়। প্রথমে দেখা হয় তার কী ছিল, মানে কোন কারণগুলো তার এই সমস্যার ভিত্তি তৈরি করেছে।
সাহস ও উৎসাহের মাধ্যমে মানসিক রোগী ৫০ শতাংশ হালকা হয় উল্লেখ করে এই ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বলেন, মানসিক রোগীরা এলে আমরা চেষ্টা করি বর্তমান রোগী কোন কারণে সে এখনো সমস্যায় আটকে আছে। অনেক সময় সে সমস্যা এড়িয়ে চলে, কারও সঙ্গে কথা বলে না, দরজা বন্ধ করে কান্নাকাটি করে। তখন আমরা তাকে মোটিভেট করি, সামাজিকভাবে মিশতে, কথা বলতে, তার কষ্ট প্রকাশ করতে। কখনো সে বলতে চায় না, তখন আমরা তাকে সাহস দিই, আপনি বলুন, কী হয়েছে? এই সাহস বা উৎসাহের মাধ্যমেই রোগী তার অভ্যন্তরীণ কষ্ট প্রকাশ করে, এতে সে প্রায় ৫০ শতাংশ হালকা হয়ে যায়।
মানসিক রোগীদের সহায়তার ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি একজন মানুষ রোগীর পাশে বসে মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে, তাহলে তা তার জন্য বড় সহায়তা হয়। বিশেষ করে প্রশিক্ষিত পেশাদার যেমন সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টরা যদি শোনেন, তারা বুঝে প্রোপার ফিডব্যাক দিতে পারেন। তবে অপেশাদার কেউ যদি ভুল তথ্য বা আতঙ্কজনক কিছু বলেন, তাহলে ভয় আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রশিক্ষিত ও পেশাদারভাবে শোনা জরুরি। পাশাপাশি তাকে ব্যাখ্যা দিতে হয়। এই সমস্যাগুলো কতদিন স্থায়ী হতে পারে, কতটা স্বাভাবিক এবং এটা যে দীর্ঘস্থায়ী নয়। তাকে সময় দিতে হয়, সহানুভূতি দেখাতে হয়।
আরএএস/এসএনআর/এএসএম