জাতীয়

ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট আগারগাঁওয়ের ‘কেকের হাট’

রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় যেন কেক উৎসব চলছে। নির্বাচন ভবনসংলগ্ন সড়কজুড়ে সারি সারি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় কেক বিক্রেতাদের দোকানে। দেখে মনে হয় যেন সেখানে কেকের হাট বসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন ভাইরাল কেক খেতে। কেউ খাচ্ছেন, কেউ ছবি তুলছেন—আবার কেউ বাহারি কেকের ভিডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

মিরপুরের ৬০ ফিট এলাকায় বসবাসকারী রোকসানা আক্তার তিন দিন ধরে স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে আগারগাঁওয়ে কেক বিক্রি করছেন। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেলের দিকে তার দোকানের সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কথা হলে রোকসানা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক ঘণ্টা আগে ছয়টা কেক এনেছিলাম, সব শেষ। আমার কেক শুধু দেখতে সুন্দর না, খেতেও মজা। আজ আর কেক আনবো না।’

পছন্দের কেক কিনছেন ক্রেতারা/ ছবি: জাগোনিউজ

আজ রোকসানার মতোই আরও অনেক বিক্রেতার দোকানের সব কেক বিক্রি হয়ে যায়। বাধন নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘দেড় সপ্তাহ ধরে এখানে বসছি। আজ সাতটা কেক এনেছিলাম, সব বিক্রি হয়ে গেছে। রসমালাই, বাটার স্কচ, চকলেট, ব্লুবেরি কেক বেশি চলে। ১০০ টাকায় এক পিস কেক দেই, মান ভালো বলে বিক্রি বেশি।’

বিক্রেতারা বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগারগাঁওয়ের কেক নিয়ে অসংখ্য ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এতে ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে ক্রেতা বেড়েছে কয়েকগুণ। সম্প্রতি জাকির ও সিমি নামের দুই কেক বিক্রেতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মানুষের এই ভিড় আরও বেড়ে যায়।

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ার, নির্বাচন ভবন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সামনের সড়কজুড়ে বসেছে খাবারের শতাধিক দোকান। কেক, পিঠা, ফুচকা, কাবাব—সবই আছে এসব দোকানে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় কেকের দোকানেই। এসব দোকানের বেচাকেনার ভিডিও করতে সেখানে ভিড় করতে দেখা যায় অনেক ইউটিউবার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে।

পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী শ্রাবণ রানা বলেন, ‘ভাইরাল কেক খেতে এসেছি। কোনটা খাব বুঝতেছি না।’

মোহাম্মদপুর থেকে দুই ভাইকে নিয়ে আসা শাম্মী আক্তার বলেন, কয়েকটা দোকানের কেক খেয়েছি। স্বাদ খারাপ না, দোকানের পেস্ট্রির চেয়ে ভালো। হোমমেইড (ঘরে তৈরি) হওয়ায় এসব কেকে মানুষের আগ্রহ বেশি।

ক্রেতাকে দেওয়ার জন্য কেক কাটছেন একজন বিক্রেতা/ ছবি: জাগোনিউজ

তবে কেক বিক্রেতাদের ভিড়ের কারণে অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বচসার ঘটনাও ঘটছে। ফুটপাতের জায়গা সংকুচিত হওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে।

নির্বাচন ভবনের বিপরীত পাশে খাবার বিক্রি করা জামিলা বেগম বলেন, ‘কেক বিক্রেতাদের জন্য গাড়ি সাইড হতে পারে না। কাস্টমার দোকানে ঢুকতে পারে না।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান

এদিকে, ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসানোর কারণে সংকুচিত হয়ে পড়েছে চলাচলের রাস্তা। এ বিষয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমাউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক এলাকার ফুটপাত ও রাস্তার পাশে দোকান বসানোয় যানজটে চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছিল। এ বিষয়ে জনগণ ৯৯৯-এ অভিযোগ করেছিলো। সবাইকে সরে যেতে বলা হয়েছে, আগামীকাল থেকে সেখানে কেউ বসতে পারবে না।’

তবে আজ শুক্রবার বিকেলেও ফুটপাতে দোকান বসতে দেখা গেছে। পুলিশ এসে কিছু বিক্রেতাকে রাস্তার মাঝখান থেকে সরিয়ে দেয়, কিন্তু পুরোপুরি উচ্ছেদ করেনি।

মধ্যবয়সী এক কেক বিক্রেতা বলেন, ‘দোষ আমাদেরই। অনেকেই রাস্তার মাঝখানে বসে গেছে, তাই গাড়ি আর মানুষ চলাচলে কষ্ট হচ্ছে। সবাই নিয়ম মেনে বসলে ব্যবসা ভালোই চলবে।’

এসএম/এমএমকে/জিকেএস