বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর পরিচালিত হত্যা-গণহত্যায় জড়িত, নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। এখন পর্যন্ত পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনালে চলছে বিচারকাজ।
এর মধ্যে আলোচনায় ছিল নতুন করে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হতে পারে। সরকারের উপদেষ্টা থেকে এমন তথ্য জানানো হলেও আপাতত ছাত্র-জনতার ওপর পরিচালিত হত্যা-গণহত্যায় জড়িত, নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের জন্য নতুন করে তৃতীয় কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ স্থানান্তর করে সংস্কার করা পুরোনো হাইকোর্ট ভবনে সরিয়ে নেওয়া হবে বলে ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে। কবে নাগাদ সেটি স্থানান্তর হচ্ছে সেটি ঠিক না করলেও বলা হয়েছে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সময় দিলেই সেটি করা হবে।
আপাতত নতুন করে কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে না। অর্থাৎ তৃতীয় কোনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে না। কারণ একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য প্রথমত বিচারক নিয়োগ দিতে হবে, আরও প্রসিকিউশন ও প্রয়োজনীয় জনবল দরকার। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা সম্ভব হবে না।
তৃতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আপাতত নতুন করে কোনো ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে না। অর্থাৎ তৃতীয় কোনো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে না। কারণ একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য প্রথমত বিচারক নিয়োগ দিতে হবে, আরও প্রসিকিউশন (আইনজীবী) ও প্রয়োজনীয় জনবল (তদন্ত কর্মকর্তা, বেঞ্চ অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী) দরকার। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করলে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা সম্ভব হবে না।
উদ্বোধন হলে পুরোদমে বিচার কাজ চলবে এই ভবনে-ছবি জাগো নিউজ
ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের বিষয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন তামিম জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকাজ টিনশেড ঘরে চলছে। তাই ট্রাইব্যুনাল-২ স্থানান্তর করা হবে। আগের পুরোনো ভবনের সংস্কার কাজ শেষে করে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে কোর্ট স্থানান্তর করা হবে। তবে সেটি করা হবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সম্মতি ও সময় দিলে। উনি যেদিন উদ্বোধনের সময় দেবেন সেদিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ সংস্কার হওয়া ভবনে স্থানান্তর করা হবে। ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচারকাজ চলছে। এরইমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে র্যাব-পুলিশপ্রধানসহ আসামি করা হয়েছে কয়েক শতাধিক।
আরও পড়ুনসেনাবাহিনী ‘ন্যায়ের পক্ষে অটল থাকবে’: সেনাসদর আর কোনো প্রতিরক্ষা সদস্যের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পরিকল্পনা নেই আওয়ামী লীগের বিচার চেয়ে এবার ট্রাইব্যুনালে যাচ্ছে এনসিপি
এমনকি সাবেক সেনাপ্রধানসহ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। রোববার (১২ অক্টোবর) থেকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখাঁরপুলের ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৯ জনের সাক্ষী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া ছয় লাশ পোড়ানো এবং ৪ আগস্ট একজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৯ জনের সাক্ষী, প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ। পরে রামপুরায় কার্নিশে একজনকে গুলি করার ঘটনায় সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে করা মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য রয়েছে। প্রসিকিউশন বলছে, চলতি বছরই শেষ হতে পারে এসব মামলার বিচারকাজ।
মামলায় গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্যাডারদের আসামি করা হচ্ছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং উসকানিদাতা হিসেবে সাংবাদিকদেরও আসামি করা হয়েছে। গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর নামেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর নামেও ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
টিনশেড এই ভবনে চলছে বিচারকাজ-ছবি জাগো নিউজ
সেই সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের মধ্যে হওয়া গুম এবং ২০২৪ সালে গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য পাঁচজন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ১০ জন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকাজ টিনশেড ঘরে চলছে। তাই ট্রাইব্যুনাল-২ স্থানান্তর করা হবে। আগের পুরোনো ভবনের সংস্কার কাজ শেষ করে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে কোর্ট স্থানান্তর করা হবে। তবে সেটি করা হবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ সম্মতি ও সময় দিলে। উনি যেদিন উদ্বোধনের সময় দেবেন সেদিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ সংস্কার হওয়া ভবনে স্থানান্তর করা হবে।
ট্রাইব্যুনালে নতুন করে গণহত্যা ও গুমের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে ২০১০ সাল থেকে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হওয়ার পর এখনো ২৯টি পুরোনো মামলার বিচার প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে কোনো কোনোটি চার্জ গঠনের জন্য, সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়ে চলমান এবং কোনোটি যুক্তিতর্ক পর্যায়ে। বর্তমানে পুরোনো মামলার অগ্রগতি চোখে না পড়লেও বেশকিছু মামলার শুনানির তারিখ ও জামিন আবেদনের শুনানি হচ্ছে।
আরও পড়ুনগুম-খুন নিয়ে ডকুমেন্টারির শুটিংয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ ৩৪ বছর পর গণভোটের আলোচনা, ঐকমত্য হলে ইসি কতটুকু প্রস্তুত মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদকে ধরতে সীমান্তসহ সব বন্দরে সতর্কতা
ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলে এখন পর্যন্ত প্রসিকিউশনের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গণহত্যা ও গুমসহ কয়েকশ অভিযোগ জমা পড়েছে। যদিও তদন্ত সংস্থার সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০২৪ সালে জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে হত্যা-গণহত্যার শিকার ও গুলিতে আহতদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক অভিযোগ দাখিল হচ্ছে। এসব অভিযোগে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্যাডারদের আসামি করা হচ্ছে।
কোর্ট স্থানান্তর করা হবে এই ভবনে-ছবি জাগো নিউজ
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং উসকানিদাতা হিসেবে সাংবাদিকদেরও আসামি করা হয়েছে। এমনকি জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সরাসরি হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর নামেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে।
এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৬ জন আইনজীবী (প্রসিকিউটর) এবং ২৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজ করছেন।
ট্রাইব্যুনাল–১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আরও পড়ুনঅভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার সামরিক না আইসিটি আইনে? ৮ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ গুমের দুই মামলা: বাহিনী প্রধানদের কাছে পাঠানো হলো হাসিনাসহ ২৮ জনের পরোয়ানা
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৬ জনের দণ্ড কার্যকরমুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। বিচারের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার পর গত ১৪ বছরে ট্রাইব্যুনাল ৫৬টি মামলার রায় দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে জামায়াতের পাঁচ শীর্ষ নেতা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
উদ্বোধনের পর এই এজলাসে চলবে বিচারকাজ-ছবি জাগো নিউজ
স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সাক্ষী গুম ও ন্যায়বিচারবঞ্চিত হওয়ার নানান অভিযোগ সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।
তবে প্রসিকিউশনের বর্তমান প্রধান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর। স্বচ্ছ ও ন্যায়বিচার করতে আমাদের যা যা করণীয় সবই করা হবে।
এফএইচ/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস