স্বাস্থ্য

বাক্সবন্দি মেশিন এখন সচল, চালু হৃদরোগ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ

জাগো নিউজের একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জেরে দীর্ঘদিন পর অবশেষে চালু হলো জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ। মাসের পর মাস বাক্সবন্দি অবস্থায় পড়ে থাকা পরীক্ষার মেশিনগুলোও সচল হয়েছে।

ফলে বাধ্য হয়ে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটতে হওয়া রোগীরা এখন হাসপাতালেই বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করাতে পারছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ উদ্যোগে রোগীদের দুর্ভোগ যেমন কমবে, তেমনই কমবে অর্থনৈতিক চাপও।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এখন থেকে নিয়মিতভাবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্যাথলজি বিভাগে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে টেস্ট করানো যাবে। চালু হওয়া পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে: CBC, ESR, Hb%, PT/INR, APTT, BT, CT, Urine R/M/E (Urine C/S হবে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে)। এগুলো চলবে দুই শিফটে। রিপোর্ট সংগ্রহ করা যাবে রাত ৮টা পর্যন্ত।

আরও পড়ুনবাক্সবন্দি মেশিন এখন ‘চায়ের টেবিল’, টেস্ট করাতে হয় বাইরে

বিভাগটির নতুন প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. দিলশাদ পারভীনও আশাবাদী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নানা কারণে প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ ছিল। অনেকগুলো মেশিন বাক্সবন্দি পড়ে ছিল। আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর আমি নিয়মতান্ত্রিকভাবে সেগুলো সচল করেছি। এখন টেস্টও করছি। আশা করছি, সামনের দিনে প্যাথলজি বিভাগ শুধু হাঁটবে না, দৌড়াবে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছি।’

পেছনের চিত্র: অকার্যকর মেশিন, বাইরের ওপর নির্ভরতা২০২৫ সালের মাঝামাঝি জাগো নিউজ প্রকাশ করে দুটি ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন— “বাক্সবন্দি মেশিন এখন ‘চায়ের টেবিল’, টেস্ট করাতে হয় বাইরে” (১৫ জুলাই প্রকাশিত) ও “মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট, হৃদরোগ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ” (২৬ আগস্ট প্রকাশিত)।

প্রতিবেদন দুটিতে উঠে আসে হাসপাতালের স্টোরে পড়ে থাকা কোটি টাকার নতুন মেশিন, যেগুলো ব্যবহার না করে চা বানানোর টেবিল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল। গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট (PT-INR, APTT, Troponin I) বন্ধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হচ্ছিল। মেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট দিয়েও পরীক্ষার অভিযোগ ছিল। ১৪ জন চিকিৎসক-কর্মকর্তা স্টাফ কার্যত বেকার সময় কাটাচ্ছিলেন। এছাড়াও ইউরোপ থেকে আসা মেশিন ফেলে রেখে অনুমোদন ছাড়াই নতুন চায়নিজ মেশিন গ্রহণ নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা।

প্রশ্ন ছিল—এতদিন কেন এই অব্যবস্থাপনার সমাধান হয়নি? কে বা কারা দায়ী? ভবিষ্যতে এ ধরনের অব্যবস্থাপনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কার্যকর কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

আরও পড়ুনমেয়াদোত্তীর্ণ রি-এজেন্ট, হৃদরোগ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ

জবাবে হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, প্যাথলজি বিভাগটি নেতৃত্বের কারণে গত সরকারের আমল থেকেই অবহেলিত ছিল। বর্তমান পরিচালক আসার পর যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনিও পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি করে ফেলেছেন। যার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, আপনাদের (জাগো নিউজের) প্রতিবেদনের পর তাকে সরিয়ে নতুন বিভাগীয় প্রধান দেওয়া হয়েছে। তিনি এরই মধ্যে সবকিছু সমন্বয় করে বিভাগটি সচল করেছেন। এখন দুই শিফটে পরীক্ষা করা যাচ্ছে। রোগীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি আর্থিক চাপও কমবে।

এসইউজে/এমকেআর/এমএস