প্রতিদিনের মতো গতকালও অফিসে গিয়েছিলেন আল-মামুন। অফিসে এসে ছোট ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথাও বললেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরই ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে প্রাণ হারান মামুন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও ভাইয়ের সন্ধান না পেয়ে অবশেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এসে ভাই আল-মামুনের হাতের আংটি দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন বোন মাহমুদা খাতুন। বলেন, আমার আদরের ভাইটা এভাবে শুয়ে থাকবে কল্পনাও করতে পারিনি।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে বসে এভাবেই আহাজারি করছিলেন বোন মাহমুদা খাতুন।
মাহমুদা খাতুন বলেন, গতকাল আমার ভাই কাজে এসে সকালে ভিডিও কলে তার ছোট ছেলের সঙ্গে কথা বলেছিল। এরপর দুপুরের পর টিভিতে খবর দেখে আমার ভাইয়ের স্ত্রী আমার ভাইকে ফোন করেন। ততক্ষণে ভাইয়ের ফোন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমরা গার্মেন্টসে ছুটে আসি। কিন্তু ভাইকে আর খুঁজে পাই না। ভাইকে খুঁজতে খুঁজতে হাসপাতালের মর্গে এসে হাতের আংটি দেখে ভাইকে চিনতে পারি।
তিনি জানান, তার ভাইয়ের নাম আল-মামুন। গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার আমতলি থানায়। চলতি মাসে ভাই ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে এই গার্মেন্টসে চাকরিতে যোগ দেয়। সে আমাদের খুব আদরের ছিল। গতকাল এসে ভাইকে অনেক খুঁজাখুঁজি করেছি। কোথাও খুঁজে পাইনি। হাসপাতালে এসে ভাইয়ের হাতের আংটি দেখে আমি চিনে ফেলি।
তিনি বলেন, আগুনের ধোঁয়ায় ভাইয়ের মুখ কালো হয়ে গেছে। মুখ দেখে চেনা যায় না। তার দুই পা এবং কাঁধের অংশ পুড়ে গেছে। কিন্তু চুল, দাঁড়ি সব ঠিক আছে। পরনের শার্ট-প্যান্ট কালো হয়ে গেছে। দেখে চেনার উপায় নেই। কিন্তু আংটি দেখে চিনতে পারি। আমার আদরের ভাইটা এভাবে শুয়ে থাকবে কল্পনা করতে পারিনি।
তিনি বলেন, ভাই চিরতরে আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। এখন আমরা হাসপাতালে এসেছি। ভাইয়ের মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাবো।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) এই অগ্নিকাণ্ডে ১৬ জন নিহত হন। সবার মরদেহ পোশাক কারখানার ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই ভবনের নিচতলায় আগুনের তীব্রতা থাকায় এবং ছাদে ওঠার দরজা দুটি তালা দিয়ে বন্ধ থাকায় অনেকেই ভবন থেকে বের হতে পারেননি। ফলে ওই ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আটকে আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার রাতে অগ্নিনিয়ন্ত্রণ ও উদ্ধার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানান।
কেআর/এমআইএইচএস/জিকেএস