রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) শক্তিশালী করতে মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি (মিগা) ৫শ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘দেশের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ কমে আসার ফলে সরকার রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ রেখেছিল। ফলে রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।’
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সির সঙ্গে এক বৈঠক শেষে অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান সাংবাদিকদের একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিই, যেখানে বিভিন্ন দেশের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। কীভাবে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং গবেষণা বাড়ানো যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় বৈঠকটি ছিল মিগার সঙ্গে— যা বিশ্বব্যাংকের একটি উইন্ডো হিসেবে কাজ করছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে বেসরকারি খাতে সহায়তা দিচ্ছে। এখন সরকারি খাতেও গ্যারান্টির মাধ্যমে সফলতা আনার উদ্যোগ নিচ্ছে।’
অতীতে আমাদের জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ছিল সাত বিলিয়ন ডলারের, যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য রপ্তানিকারকরা অসুবিধায় পড়েছেন। তাই আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দাবি জানিয়েছি এর ফান্ড পুনরায় চালু করার।- বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম
‘আমরা বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে এগিয়েছি। এর মধ্যে একটি হলো পেট্রোবাংলার প্রকল্প—প্রথম ধাপ সফলভাবে শেষ হয়েছে, এখন দ্বিতীয় স্কিম চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগির তারা আমাদের টার্ম শিট পাঠাবে।’ জানান অর্থ সচিব।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ইডিএফ আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থায়ন করা হতো। ফলে রিজার্ভে চাপ পড়তো। এখন আমরা মিগার সঙ্গে আলোচনা করেছি, তারা আমাদের বা ফাইন্যান্স ডিভিশনকে ৫শ মিলিয়ন ডলার দেবে। এই অর্থ দিয়ে বাজারে চাপ না বাড়িয়ে নতুন ঋণ কার্যক্রম চালানো হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থার মাধ্যমে ইডিএফকে এমনভাবে গঠন করা হবে, যাতে মূল রিজার্ভের ওপর কোনো বাড়তি চাপ না পড়ে।’
ড. খায়েরুজ্জামান বলেন, ‘আগে পুরো ইডিএফ রিজার্ভ থেকে আসতো। এখন এটি একটি নতুন সুযোগ—যাতে রিজার্ভ সুরক্ষিত থাকে এবং ব্যবসায়ীরা হঠাৎ ইডিএফ কমে গেলে উদ্বিগ্ন না হয়। আমরা সেই দিকটি মাথায় রেখেই এগোচ্ছি।’
আরও পড়ুনদেশের আরও ৫ তৈরি পোশাক কারখানা পেলো এলইইডি সনদচলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯%এশিয়ার জিডিপি ১.৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে আঞ্চলিক সহযোগিতাআসিয়ানভুক্ত দেশে রপ্তানি বাড়াতে করণীয়
৫শ মিলিয়ন ডলার খুব বড় অংক নয়, তবে এটা কিছুটা হলেও রপ্তানিকারকদের জন্য সুবিধা বয়ে আনবে বলে মন্তব্য করেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বলেন, ‘অতীতে আমাদের জন্য রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ছিল সাত বিলিয়ন ডলারের, যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য রপ্তানিকারকরা অসুবিধায় পড়েছেন। তাই আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দাবি জানিয়েছি এর ফান্ড পুনরায় চালু করার।’
এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘যদিও ৫শ মিলিয়ন ডলার খুব ছোট। তারপরেও এটা রপ্তানিকারকদের জন্য কিছুটা হলেও উপকারী হবে। তবে দাবি থাকবে যাতে এটা আরও বড় করা যায়, সেজন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখা।’
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের জন্য এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রয়োজনের সময় রপ্তানিকারকদের ওপর চাপ কমাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। খাতের জন্য এটি সুখবর যে, মিগা ৫শ মিলিয়ন ডলার দেবে। সংকটময় পরিস্থিতিতে এটি রপ্তানিকারকদের সহায়তা করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি আরও বাড়ানোর জন্য আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি।’
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) হলো এমন একটি তহবিল, যা বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের কম সুদে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সুবিধা দেয়। এর মাধ্যমে তারা কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারে। ফলে উৎপাদন খরচ কমে যায় এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বাড়ে।
এই তহবিল রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানির জন্য অর্থায়ন করতে সহায়তা করে, যাতে তারা রপ্তানিযোগ্য পণ্য উৎপাদন করতে পারে। এটি বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্পসহ অন্য রপ্তানিমুখী খাতকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মিগা হলো মাল্টিল্যাটারাল ইনভেস্টমেন্ট গ্যারান্টি এজেন্সি, যা বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি অঙ্গ সংগঠন। এটি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করে রাজনৈতিক ঝুঁকি বিমা এবং ঋণ গ্যারান্টির মাধ্যমে।
মিগা বিনিয়োগকারী ও ঋণদাতাদের অ-বাণিজ্যিক ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা দেয়, যেমন—সম্পত্তি অধিগ্রহণ, মুদ্রা রূপান্তর অক্ষমতা, চুক্তি ভঙ্গ ইত্যাদি। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রকল্পে অর্থায়ন আরও সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী হয়ে ওঠে।
মিগার চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো বিনিয়োগের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা।
আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম