বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কৌশলের কেন্দ্রে কর্মসংস্থানকে স্থান দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের ২০২৫ সালের বার্ষিক সভার পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে তিনি এই আহ্বান জানান।
অজয় বাঙ্গা বলেন, পৃথিবী এখন এক ঐতিহাসিক জনসংখ্যা পরিবর্তনের যুগে প্রবেশ করেছে—যা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন হবে, আর অবহেলায় তা পরিণত হবে বেকারত্ব, অস্থিরতা ও অভিবাসনের সংকটে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে চাকরি সৃষ্টি করাকে রাখতে হবে।
আরও পড়ুন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষায় আইএমএফের সতর্কবার্তাএআই ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমবাজারে ৭% চাকরি ঝুঁকির মুখেএক রেটে ভ্যাট বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৮৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ আজকের তথাকথিত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বসবাস করবে। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় ১২০ কোটি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করবে, অথচ নতুন চাকরি তৈরি হবে মাত্র ৪০ কোটি। আগামী এক দশকে প্রতি সেকেন্ডে চারজন তরুণ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করবে। এটি এক জরুরি ও নির্ধারণকারী সময়।
‘আফ্রিকায় এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি সবচেয়ে দ্রুত হবে। জাম্বিয়া প্রতিবছর যোগ করবে সাত লাখ মানুষ, মোজাম্বিকের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে, আর নাইজেরিয়ার জনসংখ্যা বাড়বে প্রায় ১৩ কোটি—যা দেশটিকে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশে পরিণত করবে।’
অজয় বাঙ্গা সতর্ক করেন, যদি উদ্দেশ্যপূর্ণ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, এই তরুণদের আশা হতাশায় পরিণত হতে পারে, যা অস্থিতিশীলতা ও অভিবাসন বাড়াবে।
আরও পড়ুনবাংলাদেশকে রাজস্ব নীতি সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: আইএমএফআন্তর্জাতিক সহযোগিতায় গতি পাচ্ছে পাচার অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়াচলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৯%
‘আমাদের লক্ষ্য হলো চাকরি। প্রায় ৯০ শতাংশ চাকরি আসে বেসরকারি খাত থেকে, তবে এর ভিত্তি তৈরি করে সরকারি বিনিয়োগ ও সুশাসন।’
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তিনটি স্তম্ভভিত্তিক কৌশল তুলে ধরেন—মানবসম্পদ ও অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি বিনিয়োগ, ন্যায্য ও পূর্বানুমানযোগ্য অর্থনৈতিক নীতি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও নিশ্চয়তা বৃদ্ধির উদ্যোগ।
তিনি আরও জানান, বিশ্বব্যাংক এরই মধ্যে প্রকল্প অনুমোদনের সময় ১৯ মাস থেকে কমিয়ে ১২ মাসে এনেছে। ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত অর্থায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং ২৩ বিলিয়ন ডলারের যৌথ অর্থায়ন প্রকল্প চালু করেছে। মোট বার্ষিক অর্থায়ন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯ বিলিয়ন ডলার, আর বেসরকারি মূলধন সংগ্রহ পৌঁছেছে ৬৭ বিলিয়নে।
২০২৪ সাল থেকে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে, ৭ কোটি মানুষ শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করেছে এবং ৩০ কোটি মানুষ উন্নত স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা পেয়েছে।
আরও পড়ুনকর্মসংস্থানের অভাব অস্থিরতা ও অভিবাসন ঝুঁকি বাড়াবে: অজয় বাঙ্গাঅন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে সময়োপযোগী সংস্কার প্রয়োজনবাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২১.২ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক
‘উন্নয়ন কোনো দান নয়—এটি কৌশল’, বাঙ্গা বলেন। ‘একটি চাকরি তখনই সৃষ্টি হয়, যখন স্কুল একটি দক্ষতায় রূপ নেয়, একটি রাস্তা বাজারে পৌঁছায়, আর বিদ্যুৎ কোনো ব্যবসায় শক্তি জোগায়। এভাবেই বিনিয়োগ মর্যাদায় পরিণত হয়।’
আইএইচও/এমএমএআর/এএসএম